সারা দেশে মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ রূপ নেয়ায় মৃত্যুর হার ক্রমে বেড়ে চলছে। তাই গত বৃহস্পতিবার ১ জুলাই হতে সারা বাংলাদেশে লকডাউন নয় শাটডাউন দেয়া হয়েছে অর্থাৎ সরকার প্রশাসনকে কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন শুধুমাত্র জরুরী কিছু পেশা ও কিছু সেক্টরের সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কার্যক্রম পরিচালনা ছাড়া বাকি সকল মানুষকে ঘরে অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য।
এ বিষয়ে আমরা গত কয়েকদিন ধরে লক্ষ্য করছি যে, প্রশাসন অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষকে ঘরবন্দি করে রাখার জন্য যাতে করে করোনাভাইরাস ভয়াবহ আকারে সংক্রামিত হতে না পারে, কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে প্রশাসন যতই কঠোর হোক না কেন, কোনভাবেই যেন সাধারণ মানুষকে ঘরবন্দি করে রাখতে পারছেন না। প্রশ্ন হচ্ছে কেন এই ব্যর্থতা ? এ বিষয়ে আমরা বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাই যে, প্রথমত সাধারণ মানুষের মনে করোনাভাইরাস ভীতি কম, বিশেষ করে দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ করোনাভাইরাস বিষয়টিকে একদমই আমলে নিতে চাচ্ছেন না। শুধুমাত্র দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ যে শাটডাউন নিয়ম ভঙ্গ করে হরহামেশায় চা দোকান , বাজারে অথবা এ দিক সে দিক ঘোরাফেরা করছেন তা নয়, আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পাই শিক্ষিত, অশিক্ষিত, উচ্চশিক্ষিত সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ এই শাটডাউনের নির্ধারিত নিয়ম নীতি তেমন তোয়াক্কা করছেন না। তাহলে এখানে বলতে হবে সচেতনতার অভাব রয়েছে, অথবা সরকার যেভাবে ভাবছে সেই ভাবনা এবং পদক্ষেপগুলো কিছু পরিবর্তন খুবই জরুরী যাতে করে সবাই এই করোনাভাইরাস এর ভয়াবহতা সম্পর্কে বুঝতে পারে। উন্নত বিশ্বের সাথে তুলনা করে দেখা যাচ্ছে যে, উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সীমিত আকারে খোলা রাখা হয়েছে এবং অন্যান্য কার্যক্রম সীমিত আকারে চালু রয়েছে যা আমাদের দেশে সাথে অনেক পার্থক্য – এক্ষেত্রে সরকার কে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনের জন্য ভিন্ন কিছু পদক্ষেপ অবলম্বন করতে হবে যাতে করে সাধারণ মানুষ শাটডাউন কার্যকর করতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রশাসনকে সহযোগিতা করে।
শুধুমাত্র চা দোকান বাজার ঘাটে যে মানুষ ভিড় করছে তা নয় বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ও চোখে পড়ার মতো ভিড় আমরা লক্ষ্য করছি এবং এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে সাধারণ মানুষের মনে যে প্রশ্ন প্রতিনিয়ত হচ্ছে, লকডাউন শাটডাউন কার্যকর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিম্ন আয়ের লোকজন যারা পরিবহনের সাথে জড়িত অথবা চা দোকানদার, রিক্সাওয়ালা তাদেরকে ঘরমুখী করার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন কিন্তু এই নিম্ন আয়ের লোকজনকে যদি জোর জবরদস্তি করা হয় তাহলে তারা কিভাবে চলবে? কীভাবে তাদের পরিবারের মুখে আহার তুলে দিবে? এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি সমাজের উচ্চবিত্ত সচেতন মহল যদি এগিয়ে আসে, গরিব লোকজনদের বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেন তাহলে দেখা যাচ্ছে কিছুটা সুফল পাওয়া যেতে পারে. বিভিন্ন নিউজে দেখা যায় সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর লোকজনের হাহাকার সেটা হয়তো কিছুটা কমে আসবে।
আরেকটি বিষয় উল্লেখ করার মতো সেটি হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেভাবে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে তারা ইচ্ছে করলেই ঘরে অবস্থান করে শাটডাউন নিয়ম নীতি কার্যকর করতে পারে, অপরদিকে যারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত তাদের অবস্থা খুবই করুন এক্ষেত্রেও সরকারকে কিভাবে বিষয়টি সমন্বয় করা যায় সে বিষয়েও চিন্তা করা জরুরি। তাহলে মনে হয় এখানেও কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।
গতবছর লকডাউনের এই সময়ে আমরা দেখতে পেয়েছি সমাজের উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীও গরিবদের বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন কিন্তু এবার এ বিষয়টি একদমই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না এটাও একটা কারণ হতে পারে। আরো কিছু বিষয় রয়েছে আমরা দেখতে পাই যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং ধর্মীয় উপাসনালয়ে কঠোরভাবে শাটডাউন কার্যকর করা হচ্ছে কিন্তু অন্যান্য সেক্টরে এরকম কি হচ্ছে ? না, এক্ষেত্রেও সরকারকে সঠিক ব্যাখ্যা দিয়ে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।
তাই সর্বোপরি শাটডাউন কার্যকর করতে সরকারকে নতুনভাবে নতুন কিছু পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে শুধুমাত্র গরিব শ্রেণীর ওপর জোরজবরদস্তি না করে সমাজের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের মাঝে আস্থা তৈরি করে সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এই শাটডাউন কার্যকর সম্ভব হলে হবে বলে সবাই বিশ্বাস করে।