শেরপুরের ঝিনাইগাতীর বিধবা মতিজান বিবির ভাগ্যে জুটেনি একটি সরকারি ঘর। ফলে দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ একটি ভাঙ্গা ঘরে বসবাস করে আসছেন মতিজান বিবি। বহুবার স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে একটা ঘর চেয়ে আবেদন নিবেদন করলেও তিনি পেয়েছিলেন শুধুই প্রতিশ্রুতি। তাই তিনি আক্ষেপ করে বলেন মরার আগে তার ভাগ্যে জুটবেকি একটি সরকারি ঘর।
মতিজান বিবি উপজেলার কাংশা ইউনিয়ন গান্দিগাও উত্তর পাড়া গ্রামের আজিজুল হক টগরের স্ত্রী ।
১৯৭১ সালে তার বিবাহ হয়। দুই ছেলে এবং দুই মেয়েসহ চার সন্তানের জননী হন মতিজান বিবি। বিবাহের পর থেকে সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকত তার। তিনি আরও জানান তার স্বামী আজিজল হক টগর চার সন্তানসহ স্ত্রীকে ফেলে রেখে ৩০ বছর আগে আরেকটা সংসার বাঁধেন। ওই সময় চার সন্তানের মুখে খাবার দিতে অনেক কষ্ট পোঁহাতে হয় তাকে।
খেয়ে না খেয়ে সারাদিন পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করতেন এই বৃদ্ধা। দিন শেষে লাকড়ি কুড়িয়ে বাড়িতে এনে আগুনে পুড়িয়ে কয়লা প্রস্তুত করা হত। এরপর তা বাজারে বিক্রি করে যা অর্থ উপার্জন হত তা দিয়ে সংসারের ছেলে মেয়ের ভরনপোষণ যোগাতেন । মতিজান বিবির ছিলো বুকভরা আশা সন্তানেরা বড় হলে তার কষ্টের অবশান হবে। কিন্তু শে আশায় গুড়ে বালি মতিজান বিবির। তার দায়িত্ব নেয়নি কোন সন্তান। এক সময় তিনি দিন রাত পরিশ্রম করতে পারলেও এখন আর আগের মতো কাজ কর্ম তো দূরের কথা বয়সের ভারে চলাফেরাও করতে পারেন না তিনি।
স্থানীয়রা জানান তার স্বামীর ভিটে মাটি না থাকায় তিনি থাকতেন অন্যের বাড়িতে। এরপর গত ৫-৬ বছর আগে পার্শ্ববর্তী দরবেশ তলা নামক পাহাড়ি উঁচু টিলায় বন বিভাগের জমির উপর তার জন্য একটা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়। ঘরটির চার পাশে রয়েছে কয়েকটি পুরনো ঢেউ টিন আর চালে রয়েছে পলিথিনের ছাউনি। বর্ষাকালে বৃষ্টিতে ভিজে যায় মেঝে আর ঝড় তোফানে ঘর টি হাওয়ায় দোল খায়। তবুও ছোট্ট ঘরটিতে খেয়ে না খেয়ে অনাহারে-অর্ধহারে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছেন অসহায় হতদরিদ্র বৃদ্ধা মতিজান।
বৃদ্ধা মতিজানের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক আল মাসুদ বলেন, উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ইতিপূর্বে ‘ক’ এবং ‘খ’ দুটি তালিকা করা হয়েছে। মতিজান বিবির নাম তালিকায় আছে কি-না যাচাই করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সেখানে তার নাম না থাকলে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তিনি ভূমিহীন হলে খুঁজ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের যে কোন সুযোগ সুবিধা তাকে পাইয়ে দেওয়ার ব্যাবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।