ঝিনাইগাতীতে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে উপজেলার ডেফলাই গ্রামের বেদে সম্প্রদায়ের লোকেরা। জানা গেছে, ২০১০ সালে উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ ডেফলাই গ্রামে প্রথমে শতাধিক পরিবার জমি কিনে বস্তি স্থাপন করেন। পর্যায়ক্রমে আরো অনেই আসেন এ গ্রামে।
বর্তমানে প্রায় ৪০০ পরিবার রয়েছে এ গ্রামে।ওই ৪০০পরিবারের ছোট- বড়ো, নারী – পুরুষ ও শিশুসহ প্রায় ৬০০ লোকের বসবাস এ পল্লীতে।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে এ সম্প্রদায়ের লোকদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে, তারা বলেন অভাব অনটন দুঃখ আর দুর্দশাই এ পল্লীর বাসিন্দাদের নিত্য সঙ্গী।
এসব বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন ঢাকা সাভারসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে এখানে বস্তি স্থাপন করেছেন। বেদে পল্লীর জামাল মিয়া জানান বাড়ি করার জন্য ৫ / ১০ শতাংশ করে জমি কিনেছেন কেউ কেউ । অর্ধশতাধিক পরিবার ঘর- বাড়ি ও নির্মান করেছেন।
আবার অনেকে আর্থিক সংকটের কারনে ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে পারেনি। তারা ঝুপড়ি বেঁধে রাত্রী যাপন করেন। আবার অনেই রয়েছেন ভুমিহীন। তারা অন্যের জমিতে ঝুপড়ি বেঁধে রাত যাপন করেন।
বেদে মাইনুল হক বলেন তাদের আদি পেশা ঝাড়ফুঁক – শিংগা লাগানো, সাপ খেলা দেখানো ও সাপ ধরা।এ পেশায় তারা আর টিকে থাকতে পারছেন না। তাদের আদি পেশা না পারছেন ধরে রাখতে। না পারছেন ছেড়ে দিতে। তিনি বলেন সরকার আমাদের জন্য আর্থিক সহায়তা দিলে আমরা উপকৃত হবো অন্যপেশা বেছে নিতে সক্ষম হব।
আদিকালে নৌকা যোগে একঘাট থেকে আরেক ঘাটে বিচিত্র জীবন যাপন করতেন তারা। নৌকার বহর নিয়ে ঘুরে ঘুরে সারাদেশে নদী পথে থেকে তাদের ওইসব পেশায় জীবন – জীবিকা নির্বাহ করতেন।
কিন্তু কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাসী নয় মানুষ। এতে ঝাড়ফুঁক আর সাপের খেলায় জীবন জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব হচ্ছে না তাদের।
দেশের নদনদীগুলো ও পড়েছে অস্তিত্ব সংকটে। ফলে তারা আদি পেশায় টিকে থাকতে না পেরে দাঙ্গায় উঠতে শুরু করেছেন। এ গ্রামের বেদে মাসুদ রানা বলেন বর্তমানে একটি নৌকা তৈরি করতে যে টাকার প্রয়োজন হয়, তা জোগার করা সম্ভব হয় না তাদের ।
বেদে রুবেল মিয়া জানান ডেফলাই বেদে পল্লীর কেউ কেউ অন্যপেশা বেছে নিতে শুরু করেছেন। আবার কেউ কেউ আর্থিক সংকটের কারনে নতুন কোন পেশা বেছে নিতে পারছেন না। বর্তমান পরিস্থিতিতে বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন চরমভাবে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছেন। তিনি বলেন বেদে সম্প্রদায়ের লোকেরা না পারছেন আদি পেশা ধরে রাখতে। না পারছেন ছেড়ে দিতে।
বেদে পল্লীর বাসিন্দা, গিয়াস উদ্দিন বলেন, এ পল্লীতে রয়েছে নানা সমস্যা। তিনি বলেন এ পল্লীতে প্রবেশ করার মতো কোন রাস্তা নেই। একটি রাস্তার অভাবে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের। মসজিদটির অবস্থা জরাজীর্ণ। বেদে সম্প্রদায়ের লোকদের দাবি পল্লী থেকে দক্ষিণে পাঁকা রাস্তায় আসা-যাওয়া করার জন্য একটি রাস্তা জরুরী প্রয়োজন।
বেদে পল্লীর আইয়ুব আলী বলেন, অর্থিক সংকটের কারনে বেদে পল্লীর শিশুকিশোররা ইচ্ছা থাকা সত্বেও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেদে পল্লীর অনেকেই পায়নি বয়স্ক,বিধবা ও প্রতিবন্ধি ভাতা।
নলকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুকুনুজ্জামান বলেন আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর সরকারি সাহায্য সহযোগিতা যতটুকু পেয়েছি তা থেকে বেদে পল্লীতে দিয়েছি। পরবর্তীতে বেদে পল্লীর সমস্যাগুলো পর্যায়ক্রমে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।