জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার গৌরিপুর ইউনিয়নের কালাকূড়া গ্রামের আল আমিন নামে এক যুবক তার ২০ শতক জমিতে ৮০টি চারা রোপণ করে এক বছরের মধ্যেই সফল হয়েছেন।
গাজীপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফলতত্ত্ব বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম জানান, ২০১৭ সালে প্রথমে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি কাপ্তাইয়ের রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ উদ্ভাবন করে বিচিমুক্ত পেয়ারার জাত বারি পেয়ারা-৪। এই পেয়ারাটি দেশি পেয়ারার চেয়ে সুস্বাদু ও উচ্চফলনশীল। হেক্টরপ্রতি এই জাতের পেয়ারার ফলন হবে ৩২ টন। তিনি বলেন, বীজমুক্ত পেয়ারাটি দেখতে লম্বাটে ও পুরোটাই খাওয়ার উপযুক্ত। অমৌসুমি ফল হিসেবে দেশের বাজারে সব সময় এ পেয়ারা পাওয়া যাবে। ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ওই পার্বত্য এলাকায় ও আমাদের গবেষকরা দুথচারটে চারা নিয়ে রোপন করে বেশ সাফল্য পান। পরবর্তীতে চাষি পর্যায়ে বাগানের চিন্তা আসে আমাদের।
সূত্র জানায়, উদ্ভাবিত ‘বারি পেয়ারা-৪থ উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর ফল। সব ধরনের মাটিতেই চাষ করা যায়। তবে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ থেকে ভারী এঁটেল মাটি, যেখানে পানি নিষ্কাশনের বিশেষ সুবিধা আছে সেখানে ভালো জন্মে। আকার ৭ দশমিক ১৪ থেকে ১০ দশমিক ১৪ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ২৮৪ গ্রাম ও টিএসএস শতকরা ৯ দশমিক ৫ ভাগ। ফলটি ৮-১০ দিন পর্যন্ত সাধারণ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়।
এছাড়া এটি রোগ ও পোকামাকড় সহিষ্ণু, উচ্চ ফলনশীল। যখন অন্য জাতের পেয়ারা পাওয়া যায় না তখন এটি বাজারে আসে। পাঁচ বছরের গাছে গড়ে ২৯৬টি ফল ধরে, যার ওজন ৮৪ কেজির বেশি। চারা রোপনের পর কিটনাশকও তেমন প্রয়োজন হয় না। কেবল মাত্র আগাছা পরিষ্কারই যথেষ্ট।
শেরপুরের ওই গ্রামের মাটি ও স্থানীয় আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ২০২০ সালে শেরপুরের ছেলে বারিতে কর্মরত বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম তার নিজ এলাকায় পরীক্ষামূলক বারির তত্ত্বাবধানে ৮০টি চারা দিয়ে শুরু করে এ বাগান। পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে ওইসব চারা গাছে প্রচুর ফুল আসলে চাষি ও বারি কর্মকর্তাদের মুখে তৃপ্তির ছাপ আসে। এ বাগানকে ঘোষণা করা হয় মাতৃবাগান। অর্থাৎ পরবর্তীতে যেন বারি ও কৃষি উদ্যোক্তারা এখান থেকে কলমের মাধ্যমে চারা সরবরাহ করে বীজমুক্ত পেয়ারা চাষ ছড়িয়ে দিতে পারে জেলা তথা দেশজুড়ে।
চাষি আল আমিন জানায়, তিনি প্রথমে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন কৃষি ও ফল বিষয়ক বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি করে এক পর্যায়ে গ্রামের বাড়িতে এসে ফলের বাগানের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মাফিক তিনি প্রথমে যান গাজীপুরের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মরত এলাকার বড়ভাই খ্যাত বৈজ্ঞানিক মনিরুল ইসলামের কাছে। তার পরামর্শে প্রথমে তিনি ড্রাগন ও মাল্টা বাগানের কাজ শুরু করেন। একই সাথে তিনি বীজমুক্ত পেয়ারা বাগানও তৈরি করেন।
তিনি বলেন, ২০২০ সালে চারা রোপনের ছয় মাসের মাথায় পেয়ারা গাছগুলোতে প্রচুর ফুল ফটুতে দেখে মনের জোর বেড়ে যায়। এরপর ছয় মাসের মধ্যে বাগানের প্রতিটি গাছে মাটি থেকে প্রায় প্রতি ডালে প্রচুর পেয়ারা ঝুলতে থাকে। এক পর্যায়ে গত এক সপ্তাহ আগে বেশ কিছু পেয়ারা তুলে নিজের পরিবার ও আশপাশের মানুষকে খাওয়ান এবং স্থানীয় একটি ফলের দোকানে বিক্রির জন্য দেন। বেশ সাড়া পান আল আমীন। যারা ফল খেয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই এ পেয়ারা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠে। এখন তার বাগানে আশপাশের অনেক মানুষ এই বীজমুক্ত পেয়ারা বাগান দেখতে আসেন।
আল আমিনের ধারনা প্রতি বছর তিনবারে প্রতি গাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ কেজি করে পেয়ারা তুলতে পারবেন। এছাড়া গাছ যত পুরোনো ও বড় হবে পেয়ারা উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে। তার এ বাগান দেখাশোনার জন্য একজন শ্রমিক রয়েছে। এছাড়া তিনি প্রায় সব সময়ই বাগানের যত্ব নিয়ে থাকে।
তিনি আরো আশা রাখেন, এই বীজমুক্ত পেয়ারাটি স্থানীয় ও সারাদেশে ব্যাপক চাহিদা ছড়াবে। আগামী বছর থেকে তিনি এ বাগান থেকে কলম করে বিক্রি করার চিন্তা করছেন এবং তার আরো কিছু জমিতে এ পেয়ারা চারা রোপণ করবেন।