২৭ বছর বয়সী যুবক ইঃ এখন সৈয়দপুরে। তিনি নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর থাপাথালি এলাকার বাসিন্দা। শখ থেকেই পায়ে হেঁটে বিশ্বভ্রমণে বের হয়েছেন এই যুবক। নেপাল ভারত, শ্রীলঙ্কা হয়ে এবার পৌঁছেছেন বাংলাদেশে। এরই মধ্যে টেকনাফ থেকে হেঁটে রওনা দিয়েছেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার উদ্দেশ্যে। তিনি আজ রবিবার সৈয়দপুরে ইকু হেরিটাইজ হোটেল এন্ড রিসোর্টে রাত্রিযাপন করছেন।
রবিবার রাত ৯টায় তিনি নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের পাঁচমাথা মোড়ে পৌঁছে। সেখানে নীলফামারী ট্রাফিক পুলিশের কর্মরত সৈয়দপুর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর নাহিদ পারভেজ চৌধুরী, স্থানীয় সাংবাদিক ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। ট্রাফিক পুলিশের ওই কর্মকর্তা নিজ উদ্যোগে মিঃ ‘ইঃ কে শহরের ইকু হোটেল এন্ড রিসোর্টে থাকার ব্যবস্থা করেন। তিনি আগামীকাল সোমবার সকাল ৭টায় সৈয়দপুর থেকে নীলফামারী হয়ে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন।
এদিকে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল থেকে তাঁর ভ্রমণ সঙ্গী হয়েছেন আলোকচিত্রী ও লেখক হোমায়েদ ইসহাক মুন। তাঁদের সঙ্গে ফুলবাড়ী থেকে যুক্ত হয়েছেন ঢাকার ফ্যাশান ডিজাইনার সবুজ কুমার বর্মন ওরফে প্রবাল। এর আগে প্রবাল টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পায়ে হেঁটে দ্রুত সময়ে ভ্রমন করার ইতিহাস গড়েছিলেন।
নেপালি যুবক জানান, পায়ে হেঁটে বিশ্বভ্রমণের অংশ হিসেবে প্রথমে ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সমগ্র নেপাল হেঁটে ভ্রমণ করেন তিনি। পরে ২০২১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভারতের কারগিল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন এবং সমগ্র ভারত ভ্রমণ করেন। সেখানে এক মাস বিশ্রাম নিয়ে শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ শেষে চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে এসে পৌঁছান।
১৮ সেপ্টেম্বর টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে পায়ে হেঁটে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া-বাংলাবান্ধার উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। এরই মধ্যে তিনি পাঁচ বছরে তিনটি দেশে প্রায় ১৩ হাজার ৮০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন বলে জানান। বাংলাদেশে ২৯ দিনে ৮৫০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে সৈয়দপুরে পৌঁছান। তিনি বাংলাবান্ধা হয়ে নেপাল যাবেন এবং নেপাল থেকে পরবর্তী ভ্রমণের রোডম্যাপ নির্ধারণ করবেন। তবে পায়ে হেঁটে বিশ্বভ্রমণের পরবর্তী পর্যায়ে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ভ্রমণ করবেন বলে জানান।
নেপালি এই যুবক আরও আরও জানান, বাংলাদেশে তাঁর মোট ১ হাজার কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে ভ্রমণ শেষ হবে। এতে তাঁর চারটি দেশে মোট ১৪ হাজার কিলোমিটার পথ ভ্রমণ সম্পন্ন হবে।
পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিশ্বভ্রমণে বের হয়েছেন নেপালি এই যুবক। নানা দেশের মানুষের সংস্কৃতি জানার আগ্রহ থেকে কাঠমান্ডু থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই ভ্রমণে আগ্রহী ‘ইঃ’। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি স্কুল ছাড়েন। এরপর ছেড়েছেন পরিবারও। তখন থেকে ভ্রমণই তাঁর জীবন বলে জানান এই যুবক।
‘ইঃ’ জানান, বাংলাদেশে এসে পথে পথে সবুজ ফসলের মাঠ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। গ্রামের হাটবাজার গুলোতে অনেকেই তাঁকে দেখে আগ্রহ নিয়ে কথা বলেছেন। কেউ ছবি তুলছেন, কেউবা আবার চা-বিস্কুট খাওয়ার আমন্ত্রণও জানাচ্ছেন। গ্রামের মাঠে কাজ করা কৃষকেরাও তাঁকে স্বাগত জানাচ্ছেন, হাসিমুখে কথা বলছেন। স্থানীয় লোকজনই তাঁর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করছেন। বাঙালির আতিথেয়তায় তিনি অভিভূত। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের মানুষের আতিথ্য তাকে মুগ্ধ করেছে।
বাংলাদেশের ভ্রমণসঙ্গী আলোকচিত্রী ও লেখক হোমায়েদ ইসহাক মুন ওই নেপালি তরুণের বন্ধু। জানতে চাইলে মুন জানান, কয়েক বছর আগে এভারেস্ট পর্বতের বেসক্যাম্পে গিয়ে ‘ইঃ’র সঙ্গে পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়। পায়ে হেঁটে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা পাড়ি দেওয়ার পর বাংলাদেশ ভ্রমণের পরিকল্পনা করে তাঁকে জানালে, তাঁর সফর সঙ্গী হন তিনি।