তানোরে শিক্ষার্থিদের সচেতনতায় সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ, মাদক, ইভটিজিং ও বাল্যবিবাহসহ, ফেসবুকের সুব্যবহার সম্পর্কে সচেতনাতামূলক দিকনির্দেশনা দিলেন ওসি কামরুজ্জামান মিয়া। | সময়ের দেশতানোর সদর মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থিদের সচেতনতায় সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ, মাদক, ইভটিজিং ও বাল্যবিবাহসহ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের সুব্যবহার সম্পর্কে সচেতনাতামূলক দিকনির্দেশনা দিলেন ওসি কামরুজ্জামান মিয়া।
জানা গেছে আজ ২২ মে (রবিনার) বেলা ১১ টায় তানোর সদর মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্লাস রুমে শিক্ষার্থিদের সচেতনতায় সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ, মাদক, ইভটিজিং ও বাল্যবিবাহ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের সুব্যবহার সম্পর্কে সচেতন মূলক বক্তব্য প্রদান করেন তানোর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অফিসার- ইনচার্জ) কামরুজ্জামান মিয়া।
উক্ত সোসাল ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন, তানোর মডেল পাইলোট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাইনুল ইসলাম সেলিম ও সহকারী শিক্ষক বৃন্দ যথাক্রমে মোঃ রেজাউল ইসলাম, মোহাম্মদ মনজুর রহমান সহকারী শিক্ষক, মোঃ নজরুল ইসলাম, মোঃ রেজাউল করিম সহকারী শিক্ষক, মোঃ আলহাজ উদ্দিন, মোহাম্মদ শিশির মাহমুদ, মোসাম্মৎ সায়েরা খাতুন, মোসাম্মৎ রোসনেয়ারা, তামান্না, তাজরীন, আরো অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় (ওসি) কামরুজ্জামান মিয়া বলেন; স্নেহের শিক্ষার্থিরা তোমারা জানো কি”দেশের রাজধানী ঢাকা মিরপুরের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক মেয়ে বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় নিজের বিয়ে ঠেকাতে পেরেছিল। মেয়েটি দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার বাবা বিয়ে ঠিক করেন। তখন তার খালাতো বোনের কথা মনে পড়ে। খালাত বোনের ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল। আর ১৫ বছর বয়সে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায়, অপুষ্ট সন্তানও বাঁচেনি। মাকে সেই কথা মনে করিয়ে দিলে তিনি বাবাকে বোঝান। কিন্তু বাবা শুরুতে অনেক আপত্তি করলেও পরে বিয়ে বন্ধ করতে রাজি হন। একজন আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মেয়েটি এখন পড়ছে।
ওসি কামরুজ্জামান আরো বলেন, এক দিন এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী (বাবা) আফসোস করে বললেন, অভাব কিছুটা কমাতে ছোট্ট মেয়েটাকে বিয়ে দিলেন। জামাতার বারবার যৌতুকের দাবি মেটাতে না পেরে এখন মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছেন। মেয়েটি ফিরে এসেছে দুটো নাতি-নাতনি নিয়ে। তাঁর অসচেতনতায় সংসারের অভাব তো কমলই না, উল্টো বাড়ল।কুষ্টিয়ার এক সচেতন অভিভাবক বললেন, ‘আমার মেয়ের জন্য অনেক বিয়ের প্রস্তাব আসে। মানা করে দিলেও অনেকে শোনে না। এখন রেগে গিয়ে বলি, যে বিয়ের প্রস্তাব আনবে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব। আমি মেয়েকে বিয়ে দেব না, চিকিৎসক বানাব। মেয়েও চিকিৎসক হতে চায়।’
আমাদের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুারো (বিবিএস) ও জাতিসংঘের শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাসটার সার্ভে ২০১৯ অনুসারে, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী মেয়েদের ৫১ দশমিক ৪ শতাংশের ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে হয়। ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগে বিয়ে হয় ১৫ শতাংশের। করোনাকালে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন বাল্যবিবাহের ওপর ২১ জেলায় গবেষণা করে ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১৩ হাজার ৮৮৬ মেয়ের বাল্যবিবাহের তথ্য পেয়েছে। এর মধ্যে ৭৮ শতাংশের বাল্যবিবাহ হয়েছে অভিভাবকের ইচ্ছায়।
সোসাল ক্লাসে তিনি বলেন, দারিদ্র্য, নিরাপত্তাহীনতার অজুহাত দিয়ে মেয়েদের বোঝা মনে করেন অভিভাবক। অথচ তাঁদের সামান্য মনোযোগে মেয়েটি পরিবারের জন্য ভরসা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই বাল্যবিবাহ না দিয়ে মেয়েসন্তানের পড়াশোনা এগিয়ে নেওয়ার জন্য অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। অভিভাবকের ইচ্ছেতেই বাল্যবিবাহ বেশি হয়। তাই অভিভাবক চাইলেই বাল্যবিবাহ বন্ধ হবে।