মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এর আওতায় সারা দেশের ন্যায় গাজীপুরের শ্রীপুর মডেল মসজিদের কাজ ২০১৮ সালে শুরু হলেও ৪ বছরে কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৪০%।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, বিশাল স্থাপনার ছাদে অপ্রয়োজনীয় রড কাটছেন ৩ জন। পাশেই ৩জন সহযোগিতা করছেন হেলপার। পাদদেশে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে জেনারেটর, কংক্রিট মিক্সচার মেশিন সহ নানা নির্মাণযন্ত্র । আশপাশের পরিবেশে দীর্ঘদিন কর্মযজ্ঞ না চলার ছাপ স্পষ্ট।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়,
গত প্রায় ১১ মাস ধরে নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকার পর ১৫ দিন আগে আবার কয়েকজন কর্মীকে দিয়ে ঢিমেতালে শুরু করা হয় রড কাটার কাজ। মোট তিনটি ফ্লোরের ঢালাই কাজ শেষ হয়েছে। নির্মাণ শ্রমিক আব্দুর রহিম, মোঃ রিপন মিয়া সহ অন্য আরো তিনজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের দেওয়া তথ্যমতে এটি তিন তলা মসজিদ। এর মেঝের আয়তন প্রায় ৩৭ হাজার বর্গফুট। সেখানে ওই জমিতে আগে থেকেই থাকা মারকাজ মসজিদটি কাছেই অন্য একটি জায়গায় সাময়িকভাবে স্থানান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করে সম্প্রতি আবেদন করেছে বলে জানিয়েছে বেশ কয়েকটি সূত্র।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গণপূর্ত অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প’ এর আওতায় গত ২০১৮ সালে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে মসজিদ নির্মাণ বাস্তবায়ন করছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গণপূর্ত অধিদপ্তর। ইসলামিক ফাউন্ডেশন নির্মাণ শেষে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কাছ থেকে এটি বুঝে নেওয়ার কথা। কাজ চলাকালীন এই ফাউন্ডেশন তা দেখভাল করছে। শ্রীপুরের মডেল মসজিদ নির্মাণের সর্বশেষ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি টাকা। মসজিদ নির্মাণ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। কাজ শুরুর পর নিয়ম অনুযায়ী দুই বছরের মাথায় ২০২০ সালে মসজিদটি তৈরি অবস্থায় হস্তান্তর করার কথা। কিন্তু সেটি আর বাস্তবায়ন হয়নি। সারাদেশে এই প্রকল্পের আওতায় ৫৬০ টি মডেল মসজিদ নির্মাণ হওয়ার কথা। ইসলামিক জ্ঞান ও সংস্কৃতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ইসলামী মূল্যবোধের পরিচর্যা ও প্রসার করার উদ্দেশ্যে ২০১৭ সংলে এই প্রকল্প হাতে নেয় সরকার।
মডেল মসজিদ তৈরিতে কাজ করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড এর পরিচালক মোঃ সিরাজ মিনহাজ বলেন, ‘ কাজ একেবারেই যে বন্ধ, তা নয়। আমরা কাজ করবো না, এমনটাও নয়’। তিনি জানান, বেশ কিছু বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে তারা লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে কতৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা কাজ করবেন। কোন কোন বিষয়ে আবেদন জানানো হয়েছে এমন প্রশ্নে সিরাজ মিনহাজ বলেন, ‘ সুনির্দিষ্ট ভাবে বিষয়গুলো এই মুহূর্তে বলতে পারছি না’। তিনি আরো বলেন, ‘ আগের মসজিদটি আমাদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া ক্ষেত্রেও অনেক সময় নেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়েই কাজটির যথাসময়ে শুরু করা যায়নি’।
এদিকে এত বড় কর্মযজ্ঞ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। শ্রীপুর পৌর এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ রেজা বলেন, ‘ ঘটা করে কাজ শুরু হলো। মসজিদ সরানো হলো, কিন্তু ৪ বছরেও শেষ হলো না মসজিদ নির্মাণ। এই সময় লাগার কারণ কী’। একই এলাকার ব্যবসায়ী মো. আবু বাক্কার বলেন, অন্য এলাকায় মসজিদ উদ্বোধন হয়ে গেছে, কিন্তু শ্রীপুরে কাজে ধীরগতির কারণে তা আরো ২ বছরেও শেষ হবে কি না, সন্দেহ আছে ‘।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন গাজীপুরের সহকারী পরিচালক মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজটি মাঝে মাঝেই সরেজমিনে গিয়ে দেখভাল করি। কাজ শেষ হওয়ার পর সেটি গণপূর্ত অধিদপ্তর আমাদের বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। ইতিমধ্যেই কাপাসিয়া মডেল মসজিদ আমাদের বুঝিয়ে দেওয়ার পর সেটি উদ্বোধন করা হয়েছে’। তবে শ্রীপুর মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকার বিষয়টি তিনি জানেন না বলেও জানান তিনি।
গণপূর্ত বিভাগ গাজীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন চাকমা বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে কাজ করবেন না বলে তাদের (গণপূর্ত) কাছে আবেদন করেছে। তারা (ঠিকাদার) কাজ বন্ধ রেখেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত পেলে নতুন করে কার্যাদেশ আহবান করা হতে পারে।