সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যুতে স্বজনদের আহাজারি। আজ বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুরের শ্রীপুরের বদনীভাঙ্গা গ্রামে।
নিভৃত গ্রামে নুসরাতদের বাড়ি। বাড়ি লাগোয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানে প্রথম শ্রেণিতে পড়ত সে। সহপাঠীরা শেষবারের মতো নুসরাতকে দেখতে বাড়িতে আসছেন। থেঁতলানো রক্তাক্ত মুখ দেখে ভেজা চোখে ফিরে যাচ্ছেন তাঁরা।
গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৫ টায় শ্রীপুরের মাওনা ইউনিয়নের বদনীভাঙা গ্রামে বদনীভাঙা-গাজীপুর আঞ্চলিক সড়কে দুর্ঘটনায় নিহত হয় মোছা. নুসরাত (৬), তাঁর বাবা মো. বাবুল মিয়া (৩৪) ও নানি মোছা. বাছিরুন নেছা (৫৫)।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা ইউনিয়নের শিরিষগুড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, নুসরাতদের বাড়ির উঠানে কান্নার রোল। তাকে শেষবারের মতো দেখতে ভিড় করছেন স্বজন, প্রতিবেশী ও পরিচিতজনেরা। বাড়ির পশ্চিম পাশে একসঙ্গে দুটি কবর খোঁড়া হচ্ছে। আরও একটি কবর খোঁড়ার কাজ চলছে নুসরাতের নানির বাড়িতে।
উঠানে বসে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন নুসরাতের খালা মোছা. মোর্শেদা। কেঁদে কেঁদে বলছিলেন, ‘একলগে সবাইরে নিয়ে গেলা আল্লাহ? এখন মায়ের মন কি দিয়া বুঝাইবো। কেমনে সব শেষ হইয়া গেল।’ তাঁর পাশেই কাঁদতে কাঁদতে বাকরুদ্ধ নুসরাতের দাদি মহেলা বেগম।
নুসরাতের বাবা মো. বাবুল মিয়ার লাশ তখনো ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। সেখানে লাশ আনতে গেছেন নুসরাতের মা সুরাইয়া বেগম।
বাবুল মিয়ার ভাই হামিদুল ইসলাম বলেন, নুসরাত ছিল বাবুলের একমাত্র মেয়ে। এর আগে বাবুলের এক সন্তান জন্মের কিছুদিনের মধ্যেই মারা যায়। বাবুল মাওনা এলাকার একটি স্পিনিং কারখানায় চাকরি করতেন। কারখানায় যাওয়া-আসার সুবিধার্থে ছয় মাস আগে মোটরসাইকেল কিনেছিলেন তিনি। নুসরাতের নানির বাড়ি বদনীভাঙ্গা গ্রামে। তবে বাছিরুন নেছা নুসরাতদের সঙ্গেই থাকতেন।
হামিদুল বলেন, বাবুলের নানিশাশুড়ি অসুস্থ থাকার খবরে বুধবার দুপুরে তিনজন বদনীভাঙ্গা গ্রামে যান। রোগী দেখে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় তিনজনেরই মৃত্যু হয়। হামিদুল আরও জানান, বাবুলের স্ত্রী মরদেহ আনতে আজ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবস্থান করছেন। দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর বাবুলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টায় তাঁর মৃত্যু হয়। বিকেলের আগেই তিনজনের দাফনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বাবুল মিয়ার আরেক স্বজন মো. আলমগীর হোসেন বলে, মোটরসাইকেলে করে বাবুল মিয়া ওই দুজনকে নিয়ে তাঁদের আত্মীয়ের বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন। বিকেল সাড়ে ৫টায় তাঁদের মোটরসাইকেল ছোট সড়ক থেকে বদনীভাঙা-গাজীপুর আঞ্চলিক সড়কে প্রবেশ করেছিল। হঠাৎ গাজীপুর অভিমুখে যাওয়া একটি লাকড়িবাহী ট্রাক তাঁদের মোটরসাইকেলের সামনে আঘাত করে।
মাওনা পুলিশ ফাঁড়ির এস আই উজ্জ্বল হোসেন মল্লিক প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাকটি পুলিশি হেফাজতে আছে। চালককে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।