ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে নির্মিতব্য প্র্ণূদৈর্ঘ্য প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘মাইক’ চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু হয়েছে। তরুণ লেখক, কলামিস্ট ও সংগঠক এফ এম শাহীনের প্রযোজনায় চলচ্চিত্রটি যৌথভাবে পরিচালনা করছেন এফ এম শাহীন ও হাসান জাফরুল (বিপুল)।
সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরের পদ্মা লাইফ টাওয়ারে জাগরণ টিভির কার্যালয়ে “মাইক” চলচ্চিত্রটির অভিনেতা ও কলাকুশলীদের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিয়ে নির্মিত ‘মাইকথ চলচ্চিত্রের চুক্তি স্বাক্ষ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, সংস্কৃতি ছাড়া সমাজ পরিপূর্ণভাবে বিকাশের সুযোগ নেই। দেশের চলচ্চিত্র ঝিমিয়ে পড়ার কারণে, সমাজে কুসংস্কার ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীতার ৫০ বছর পারও দুর্ভাগ্যের সাথে বলতে হচ্ছে, চলচ্চিত্র আজ সমাজ থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। সেই জায়গায় ধর্মান্ধতা দখল করে নিচ্ছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন,এক সময় সিনেমা বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আজ চলচ্চিত্রের মান কমে যাচ্ছে, দর্শকরা হারিয়ে গেছে না-কি বিষয়টি চিন্তার। দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে একসময়ে সাতশথর বেশি সিনেমা হল ছিলো। এখন তা একশ’র নিচে নেমে এসেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
তিনি আরো বলেন,সংস্কৃতির চর্চা ধীরে ধীরে আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাওয়ার কারণে তৈরি হওয়া শূন্যতা অন্যরা দখল করে নিয়েছে। যা অনেক বেশি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভিত্তি করে ‘মাইকথ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে। দর্শকদের মনে দাগ কাটবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত ও গুরুত্বারোপ করেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেছেন, চলচ্চিত্র সম্পাদনার ক্ষেত্রে আমাদের আরো টিকে থাকার জায়গা তৈরী করতে হবে। নতুন নতুন চলচ্চিত্র নির্মাণ করে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে। একটি অসম্প্রাদায়িক, গণতান্ত্রিক চেতনা ধারণ করতে হবে। যুগের সাথে তাল মিলেয়ে নতুন নতুন চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। এপ্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বের সাথে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, সিনেমা সংস্কৃতির পার্ট, মানুষের আবেগ, সুখ- দুঃখের নানাদিক এতে ফুটে উঠে। মূল্যবোধের মূল স্পীড সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও গবেষণা উপ কমিটির সদস্য মাহমুদ সালাউদ্দিন বলেন, বাংলা ও বাঙ্গালির কাছে বর্তমানে চলচিত্র নিয়ে একটি নেতিবাচক ধারনা তৈরি হয়েছে। আমি আশা করবো মাইকের মত চলচিত্রের মাধ্যমে এই বিরুপ ধারনা দূর হবে ও সিনেমা জগতে যে ধ্বস নেমেছে সেটার দ্রুত উন্নতি ঘটবে। শাহীনের মতো আরো অনেক সৃজনশীল মানুষ এধরনের চলচ্চিত্র নির্মানে এগিয়ে আসবে সেটাই আশা থাকবে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেছেন, মাইক যেমন একটি শব্দকে কম্পিত করে তেমনি চলচ্চিত্র হিসেবেও এটি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত কাহিনিকে বিশেষ ভঙ্গিমায় ধারণ করবে বলে আমি মনে করি। আশা করছি, এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে স্বাধীনতার ইতিহাস আরো শক্তিশালী হবে। মাইক চলচ্চিত্রের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করেন তিনি।
বিশিষ্ট অভিনেতা তারিক আনাম খান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে পেয়ে আমি গর্বিত। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। সেই মহান মানুষকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রে আমি কাজ করছি, নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে।
অভিনেতা নাদের চৌধুরী বলেন, ২০০১ সালের পর আমরা সিনেমা হলে বোমা হামলা দেখেছি, নগ্ন ছবি হয়েছে। এসব তৎকালীন সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে হয়েছে। মানুষ যাতে আর সিনেমা হলে না যায়। সিনেমা হল থেকে দর্শককে বিমুখ করে দেয়া হয়েছে। যারা সাম্প্রদায়িক শক্তি তারা সমাজকে পেছন দিকে নিয়ে যেতে চায়।
চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, মাইক আমাদের বাঙালি জাতির কাছে উৎসব আনন্দের একটি প্রতীক। জাতি হিসেবে আমাদের আরো বড় একটি আনন্দের বিষয় বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ। সেই ভাষণকে দেশ থেকে দেশান্তর, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য মাইকের কোন বিকল্প নেই। সেই ধরনের একটি বিষয় নির্ধারন ও সিনেমার ছোট একটি অংশ হতে পেরে আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত।
অভিনেত্রী তানভীন সুইটি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারণে আজকে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে বাস করছি। যার উৎসাহে আজ আমরা স্বাধীন রাষ্ট্রে বসবাস করছি। ৭৫ পরবর্তী সময়ে সেই জায়গাটা একদমই অন্ধকার ছিলো। ‘মাইকথ চলচ্চিত্রটি পঁচাত্তর পরবর্তী সময়কার। সেই জায়গা নিয়ে একটি চলচ্চিত্র ‘মাইকথ। আমরা চাই এই চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস জানুক।
অ্যাকটিভিষ্ট লীনা পারভীন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মাইকের মত এধরনের সিনেমা আরো বেশি বেশি তৈরি করার উদ্যোগ নিতে হবে।
জাগরণ টিভির প্রধান সম্পাদক এবং ‘মাইকথ চলচ্চিত্রের গল্পকার ও প্রযোজক এফ এম শাহীন শিশুতোষ এ চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদান পাওয়ায় আনন্দ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন,আমি বিগত দিনে আমার সংগঠন ‘গৌরব ৭১থ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আগামীর প্রজন্ম গড়ার লক্ষ্যে আনন্দ আয়োজন করি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থেকে শিশুদের মনোবিকাশ বৃদ্ধির চেষ্টায় কাজ করেছি। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে শিল্পের অন্য কোনো মাধ্যম আমাদের চেতনার জগতে ততোটুকু নাড়া দিতে যথেষ্ঠ নয় যতটুকু চলচ্চিত্র দিতে পারে।
‘
মাইকথ চলচ্চিত্রের গল্পকার ও প্রযোজক এফ এম শাহীনের সঞ্চালানায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলা জার্নালের প্রকাশক ও সম্পাদক হাবিবুর রহমান রোমেল, সাবেক ছাত্রনেতা জসীমউদ্দিন ভূইয়া , ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাধন, গৌরব ৭১থএর সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম রুপম, সহকারী পরিচালক, প্রেস উইং, প্রধানমন্ত্রীথর কার্যালয় গুলশাহানা ঊর্মি, বিবার্তা২৪ ডটনেটের সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসিসহ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে মোট ২০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অনুদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত বছরের ১৫ জুন তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে অনুদানপ্রাপ্ত এসব চলচ্চিত্রের নাম ঘোষণা করা হয়।এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তিনটি, শিশুতোষ দুটি ও সাধারণ শাখায় ১৫টি। সেখানে শিশুতোষ ক্যাটাগরিতে এফ এম শাহীনের লেখা ‘মাইক’ চলচ্চিত্রটিও স্থান পায়। সহযোগী প্রযোজক হিসেবে আছেন ডাঃ ফেরদৌস খন্দকার ।