২০১৪ সালে ১১ জুন সন্ত্রাস অপরাধ দমন ও মাদকের বিরুদ্ধে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহন করেছেন। এ লক্ষে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, র্যাব, কাজ করে যাচ্ছে। এখন এসকল স্থানে অপরাধ কমে গেলেও মাদক এখনও রয়ে গেছে। যে মাদক ব্যবসা করে সে যে দলেরই হোক না কেনো তাকে কোন রকম ছাড় দেয়া হবে না বলে সংসদে জানিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষনা করার পরেও গাজীপুর সদরের ২৫ নং ওয়ার্ড পূর্ব ভুরুলিয়া এলাকায় ইয়াবা ব্যবসার শীর্ষে শামীম এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামের বাড়ি বরিশালের কোন এক অজপাড়া গ্রামে। প্রায় ১২ বছর আগে পূর্ব ভুরুলিয়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মাহাবুবের মেয়ে রুপার সাথে বিয়ের একটি অনুষ্ঠানে পরিচয়। অতঃপর প্রেম ভালবাসা, একপর্যায়ে পালিয়ে বিয়ে করেন শামীম-রুপা দম্পতি। বিয়ের পর অভাবের তাড়নায় কোথাও কোন জায়গা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত শ্বশুর বাড়িতে ঘর জামাই হিসেবে স্থান পায় শামীম। বিয়ের পর পরই সংসার জীবনের ঘানি টানতে গাজীপুরের একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেন ৭ বছর। চাকুরী করে যে টাকা বেতন পেতেন সে টাকায় সংসারে চালাতে হিমশিম খেতে হয় শামীমকে।
অভাব-অনটনের সংসারের ইতি টানতে এবং উচ্চাবিলাসী জীবনযাপনের লালসায় সখ্যতা গড়ে তুলেন তারই নিকট আত্মীয় বেয়াই একাধিক মাদক মামলার আসামী শহরের শ্বশানঘাট এলাকার ইয়াবা ব্যবসায়ীদের অন্যতম হোতা চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজের সঙ্গে। তারপর তিনি অল্প দিনে অধিক টাকার লাভবানের লালসায় এক পর্যায়ে বেছে নেন নিষিদ্ধ ইয়াবা ব্যবসা। শ্বশুর বাড়িতে বসবাস গড়ে তুলেন ওপেন সিক্রেট ইয়াবার বিশাল সিন্ডিকেট। এলাকায় এখন তিনি ‘ইয়াবা সম্রাটথ নামে পরিচিত। ইয়াবা কারবারে নামার পর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। অল্প সময়ে কোটিপতি হবার স্বপ্নে সে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন অপরাধীর তালিকায়। অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোঁখে ধুলো দিয়ে এলাকায় গড়ে তুলেছেন নিষিদ্ধ ইয়াবার সাম্রাজ্য। শামীম এখন পূর্ব ভুরুলিয়ার শীর্ষ পর্যায়ের ইয়াবা ডিলার। অনেকে তাঁকে বলেন থাকেন ‘ইয়াবা সম্রাটথ। শুধু আব্দুল আজিজই নয়, কক্সবাজার, টেকনাফ ও গাজীপুর জেলার বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে শামীমের। বিগত ৫ বছরে দিনে দিনে চোখের পলকে ‘আঙ্গুল ফুলে কলা গাছথ হয়ে উঠলেও এই ধনাঢ্য ইয়াবা ব্যবসায়ী শামীম ছিলো বরাবরই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোঁখের আড়ালে।
কখনো ব্লু কালার, কখনো বা কালো কালারের সুজুকি ব্র্যান্ডের গাজীপুর-ল-১১-২৫৪৩ সিরিয়ালের দামী জিক্সার মোটরসাইকেল নিয়ে চলাফেরা করেন ‘রাজার হালতেথ। ইয়াবা ব্যবসা করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়ায় এলাকায় শামীমকে নিয়ে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন। এলাকার সাধারণ নাগরিকরা শামীমের এ আকষ্মিক পরিবর্তনের রহস্য নিয়ে চিন্তিত হলেও পিছনে ইয়াবা ও মাদকের নগদ বাণিজ্যকেই মূলধন কিংবা উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। অত্যন্ত সুচতুর শামীম এখনো প্রকাশ্যে ইয়াবা ব্যবসা করে বর্তমানে অর্ধশত কোটি টাকার মালিক। তবে সে নিজেকে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরী করার দাবী করলেও সেই চাকরী গত ৫ বছর আগে ছেড়ে দিয়ে এখন তার নেপথ্যে রয়েছে মূলত ইয়াবা ব্যবসা। শামীম ছাড়াও এই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে তার পরিবারের অনেকের সম্পৃক্ততা থাকার কথা বলছে খোদ এলাকার মানুষও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পূর্ব ভুরুলিয়া এলাকার কয়েকজন ব্যাক্তির সাথে আলাপচারিতায় উঠে আসে শামীমের উত্থানের কাহিনী। যা সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, মাঠপর্যায়ের কয়েকজন খুচরা মাদক বিক্রেতাদের সাথে কথা বললে তারা জানান, ২৫ নং ওয়ার্ড অর্ন্তগত পূর্ব ভুরুলিয়া, বন্যপাড়া, চাপুলিয়া,পাজুলিয়া এলাকাসহ আরো বেশ কয়েকটি এলাকায় ইয়াবা ব্যবসা একাই নিয়ন্ত্রন করছেন শামীম।
তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে ইয়াবা ব্যবসা করে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াতে পারছেন শামীম। যে কারণে শামীমকে গ্রেপ্তার করছেনা। এদিকে প্রশাসন মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করলেও অদৃশ্য শক্তির গুনে শামীম রয়েছে বহাল তরিয়তে। এ কারণেই শামীমের মাদক বাণিজ্য বন্ধ হচ্ছে না। ইয়াবার (মাদক) চোরাচালান এর পাইকারি ব্যবসার বদৌলতে আমুল বদলে গেছে শামীমের জীবনধারা। যা সকলের চোখে পড়ার মতো। কেউ কেউ বলছেন ইয়াবা ব্যবসা করে অর্ধশত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ায় জায়গা কিনে বাড়ি করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন শামীম। সচেতন মহলের অভিমত, অতিদ্রুত শামীমের মাদকের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে ফেলা জরুরী। তাছাড়া সাধারণ জনগণ সোচ্চার না হলে এ মরণঘ্যাতির থাবা কখনো বন্ধ হবে না। এছাড়াও এলাকায় রাতে পুলিশি টহলও জোরদার করা জরুরী বলে তারা মনে করেন। পাশাপাশি র্যাব, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর, পুলিশ প্রশাসন ও মহানগর গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবিথর) হস্তক্ষেপ চেয়েছেন এলাকাবাসী। কেননা শামীমের বাড়ির আশেপাশে মাঝরাতে অপরিচিত নামীদামি গাড়ি ও মোটরসাইকেলের সন্দেহাতীত চলাচল বেড়েছে। তা পর্যবেক্ষণ করে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে শামীমের মাদক ব্যবসা কমবে বলে ধারণা করেন তারা এবং ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচবে যুবসমাজ। আরো অনুসন্ধ্যান চলছে