অবৈধ ও নকল হ্যান্ডসেট বন্ধে ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টারের (এনইআইআর) কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদারের সভাপতিত্বে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে নতুন এই প্রক্রিয়ার উদ্ধোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। আগামী ৩ মাস এই কার্যক্রম চলবে। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এনইআইআর চালুর ফলে অবৈধ হ্যান্ডসেটের ব্যবহার বন্ধের পাশাপাশি কমবে মোবাইল ফোন চুরি সংক্রান্ত অপরাধ। দেশীয় মোবাইল ফোন শিল্পের প্রসারের পাশাপাশি বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়।
এনইআইআর কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গেল ৩০ জুনের মধ্যে চালু থাকা সব মোবাইল হ্যান্ডসেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়েছে,ফলে সেগুলো আর বন্ধ হবে না। কোনো গ্রাহক নতুন মোবাইল ফোন চালু করলে তা বন্ধ না করেই এনইআইআরথর মাধ্যমে যাচাই করা হবে। হ্যান্ডসেটটি বৈধ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, যেসব হ্যান্ডসেট নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে তার মধ্যে কোনোটি অবৈধ হয়ে থাকলে গ্রাহককে জানিয়ে তিন মাস সময় বেঁধে দেওয়া হবে। ওই তিন মাসের মধ্যে গ্রাহক তার মোবাইল ফোনটি বৈধ করে নিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটি নিবন্ধিত হয়ে যাবে। তিন মাস পর অবৈধ হ্যান্ডসেটে কোনো সিমই কাজ করবে না। এ নিয়ে সরকার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোস্তাফা জব্বার বলেন, টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক সম্প্রসারণের পাশাপাশি ডিজিটাল অপরাধের বিস্তার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তা নিয়ন্ত্রণ আনতে না পারলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এর সঙ্গে রয়েছে অবৈধ হ্যান্ডসেট চোরাচালান ও ডিজিটাল নিরাপত্তা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এনইআইআর চালু করেছি, যা এসব ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ অবদান রাখবে।
তিনি বলেন, দেশের সব মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীকে নিবন্ধনের আওতায় আনার পাশাপাশি গ্রাহক যাতে কোনোভাবে ভোগান্তি বা হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন। বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধন চালুর ফলে অপরাধী দ্রুত শনাক্ত হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সিমের সঙ্গে হ্যান্ডসেট নিবন্ধন চালুর ফলে সমাজ ও রাষ্ট্র অধিকতর নিরাপদ হবে।
অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব জনাব মো. আফজাল হোসেন বলেন, এনইআইআর চালুর ফলে অবৈধ ও নকল হ্যান্ডসেট আমদানি ও বিক্রি বন্ধ হবে এবং সাইবার অপরাধ কমবে। গ্রামের সাধারণ মানুষও যাতে এনইআইআর সর্ম্পকে অবগত হয় সে লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারণার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বিদেশ থেকে বৈধভাবে কিনে আনা বা উপহার পাওয়া হ্যান্ডসেট দেশে চালু করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবেই নেটওয়ার্কে সচল হবে। বিদেশ থেকে আনা বা উপহার পাওয়া হ্যান্ডসেট নিবন্ধনের জন্য neir.btrc.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে গ্রাহককে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। তার পোর্টালের Special Registration সেকশনে গিয়ে মোবাইল হ্যান্ডসেটের আইএমইআই নম্বরটি দিতে হবে। বর্তমান ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে বিনা শুল্কে সর্বোচ্চ দুটি এবং শুল্ক দিয়ে আরও ছয়টি হ্যান্ডসেট সঙ্গে আনতে পারেন।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসের ছবি/স্ক্যান কপি (যেমন পাসপোর্টের ভিসা/ইমিগ্রেশনের তথ্য, ক্রয় রসিদ ইত্যাদি) আপলোড করে Submit করতে হবে। হ্যান্ডসেটটি বৈধ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হবে। বৈধ না হলে এসএমএস-এর মাধ্যমে গ্রাহককে জানিয়ে পরীক্ষাকালীন সময়ের জন্য নেটওয়ার্কে যুক্ত রাখা হবে। পরীক্ষামূলক সময় পার হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে বিটিআরসি। মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের সাহায্যেও এ সেবা নেওয়া যাবে।
মোবাইল হ্যান্ডসেট বিষয়ে যেকোনো সমস্যার সমাধান ও যাবতীয় তথ্য মিলবে বিটিআরসির হেল্পডেস্ক ১০০ নম্বরে ফোন করে।
এছাড়া neir.btrc.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে সব ধরণের তথ্য পাওয়া যাবে।
#
রায়হান নওয়াজেশ প্রবাল, বিশেষ প্রতিনিধি, সময়ের দেশ (০১ জুলাই ২০২১)।