আজগাজীপুরের পল্লী অবকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই অবকাঠামোর মধ্যে মূলত রয়েছে কাঁচা সড়কগুলোকে পাকা করা। আর এর জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৬৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘গাজীপুর জেলা পল্লী অবকাঠামো উন্নয়নথ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় জেলার প্রায় তিনশ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক পাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া দুইটি গ্রোথ সেন্টার বাজার উন্নয়নের প্রস্তাবও রয়েছে এই প্রকল্পে।
মঙ্গলবার (২২ জুন) প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রকল্পগুলো অনুমোদন দেয়া হয়। উল্লেখ্য, একনেকে এসব প্রকল্প অনুমোদনের জন্য দীর্ঘদিন গাজীপুর মহানগরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সচিবালয় চষে বেড়িয়েছেন। তাঁর এই আন্তরিক ভূমিকার জন্য জেলার নাগরিকরা তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশনের জন্য এবং বিভিন্ন অঞ্চলে বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের নিমিত্তে জমি অধিগ্রহণথ প্রকল্পে ৭৮২ কোটি ২৫ লাখ টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, ‘গাজীপুর জেলা পল্লী অবকাঠামে উন্নয়নথ শীর্ষক এই প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮৫ কোটি টাকা। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এটি বাস্তবায়নের কাজ করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে জেলার ২৮৬ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক পাকা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য বলছে, গাজীপুরে মোট নিবন্ধিত গ্রামীণ সড়কের পরিমাণ ৬ হাজার ৬৯৪ দশমিক ৩১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৪ হাজার ৩৯৬ দশমিক ১ কিলোমিটার সড়ক কাঁচা। প্রকল্পের আওতায় এর ৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ সড়ক পাকা করা হবে। এতে গ্রাামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা কমিশন মনে করছে, শিল্পাঞ্চলে ভারী যানবাহনের চলাচলে সহায়ক সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্ত করার মাধ্যমে পরিবহন ব্যয় সময় কমানো যাবে। গ্রামীণ জনগণের জন্য গ্রাম, বাজার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত সুবিধা বাড়বে। এতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী বাড়তি সুবিধা পাবে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বরে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় কিছু সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। এটি এখন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন হয়েছে। চলতি বছর জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন মেয়াদের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় বলছে, ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সড়ক যোগাযোগের জন্য গাজীপুর জেলা প্রবেশদ্বার হিসেবে বিবেচিত। এ জেলার বিভিন্ন দিকের মূল সড়ক এবং সংযোগ সড়ক বাস্তবায়ন করা অপরিহার্য। জেলাটি শিল্প খাতেও দেশের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলা। সারাদেশের রাজস্ব আয়ের একটি বিরাট অংশ আসে এ জেলার শিল্পাঞ্চল এবং পর্যটন এলাকা থেকে। ফলে এই জেলার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ উন্নত হওয়া জরুরি।
মন্ত্রণালয় বলছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে প্রকল্প এলাকায় সহজ ও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা, শিল্পজাত পণ্যেও বাজারজাত করণের সুবিধা এবং গ্রামীণ জনগণের বাণিজ্যিক সুবিধা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এই সুবিধা পরবর্তী সময়ে রফতানিযোগ্য পণ্য পরিবহনেও ভূমিকা রাখবে। এই জেলায় গ্রামাঞ্চলের অনেক সড়কই এখনো উন্নয়ন করা সম্ভব না হওয়ার কারণেই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে, প্রকল্পের আওতায় দুইটি গ্রোথ সেন্টার বাজার উন্নয়নেরকরা হবে। এলজিইডি বলছে, গ্রামীণ অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে গতিশীল করতে এ ধরনের গ্রোথ সেন্টার ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। এর মাধ্যমে কৃষক সহজেই তার উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিতে পারেন এবং ফসলের ন্যায্যমূল্য পান। এর মাধ্যমে জনগণের আয় বাড়ে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়, যা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। গাজীপুরের গ্রামীণ এলাকায় এরকম দুইটি গ্রোথ সেন্টারও সংশ্লিষ্ট এলাকার নাগরিকদের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।
এই প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের আওতায় ৬৫ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক উন্নয়ন, ৯১ দশমিক শূন্য ৩ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়ন ও ২৮৭ দশমিক ১২ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক উন্নয়ন করা হবে। সবগুলো সড়কই একইসঙ্গে প্রশস্তও করা হবে। এছাড়া গ্রামীণ সড়কে ২১৫ মিটার ব্রিজও নির্মাণ করা হবে। আর গ্রোথ সেন্টার বাজারও প্রকল্পটির আওতায় গড়ে তোলা হবে।