কর্মক্ষেত্রে সাধারণ চাকরিজীবীদের ছুটি থাকলেও কৃষকদের কোনো ছুটি নেই, একটার পর একটা কৃষিকাজ লেগেই থাকে। আর সেই কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয় তাদের। আমন ধান কাটার পরে শুরু হয়ে যায় বিভিন্ন কৃষি আবাদ। শাক-সবজি, গম, ভুট্টাসহ নানা ধরনের চাষাবাদ শেষ হতে না হতেই আবার শুরু হয়ে যায় বোরো ধান রোপণের সময়। ন্যায্য দাম না পেয়েও বোরো ধান লাগানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার চাষিরা।
সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায় সকালের শীত উপেক্ষা করে সন্ধ্যা অবধি বোরোর জমি প্রস্তুত ও চারা রোপণ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কেউবা জমিতে হাল চাষ দিচ্ছেন।
কেউ জমির আইলে কোদাল পাড়া কিংবা জৈব সার বিতরণ কাজে ব্যস্ত। কেউ সেচের জন্য ড্রেন নির্মাণ কিংবা পাম্পের বা শ্যালো মেশিনের জন্য ঘর তৈরি করছেন।
আবার অনেকে তৈরি জমিতে পানি সেচ দিয়ে ভিজিয়ে রাখছেন। আনুসঙ্গিক কাজ শেষ করে কেউবা বীজতলা থেকে চারা তুলে তা রোপণ করছেন ক্ষেতে।
চারা রোপণের প্রতিটি কাজ ঠিকমতো করলেও মনে শান্তি নেই কৃষকদের। সবার মনেই রয়েছে হতাশা। ধানের ন্যায্য দাম না পেলে লোকসান গুনতে হবে।
তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের চাষি রবীন বলেন, কিছুদিন ধরে ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে আমাদের। তাই ধান চাষাবাদ করে আমরা সব সময় হতাশার মধ্যেই থাকি। আবার মাঝেমধ্যে আশায় বুকও বাঁধি, না জানি কখন ধানের দাম বেড়ে যায়।
দেশীগ্রাম ইউনিয়নের কাটাগারি গ্রামের বিজয় রায় জানান, ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় আমরা এবার বোরো ধান লাগানো কমিয়ে দিয়েছি। আগে যখন ধানের দাম পেতাম তখন আমরা ১০ থেকে ১২ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ করতাম। এখন আমরা শুধু সারা বছরের ভাতের জন্য যে চাল প্রয়োজন সেই পরিমাণ জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ করছি। এবার বোরো ধান লাগানো কমিয়ে দিয়ে বিভিন্ন শাক-সবজি চাষাবাদ করছি।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা মন্টু জানান, বোরো ধান লাগাতে দিন-রাত পরিশ্রম করতে হয়। এছাড়া বোরো আবাদে খরচও বেশি হয়। বোরো ধান লাগানোর পর থেকে তিন-চার দিন পর পর সেচ দিতে হয়। তারপরও যদি ন্যায্য দাম না পাই তবে লোকসানের মুখে পড়তে হবে আমাদের। তাই সরকারের কাছে আমাদের আবেদন। বোরো আবাদে যেন আমাদের ভর্তুকি দেওয়া হয়।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বোরো ধান রোপণের জন্য কৃষকদের লাইন, লোগো, পার্চিং ও সুষম সার প্রয়োগসহ নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। আশা করা হচ্ছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বোরোর বাম্পার ফলন হবে।