সকল নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের গ্রন্থাগারের বিপুল পরিমাণ পুরাতন মূল্যবান বইপত্র গোপনে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম আহমেদ ফারুকের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ উঠেছে। আর এ ঘটনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক -শিক্ষিকা কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অভিযোগে জানা গেছে, বিগত ১৯৬৪ সালে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজটি স্থাপিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে এটিকে কলেজে উন্নীত করা হয়েছে। বর্তমানে কলেজটিতে শুধুমাত্র বিজ্ঞান শাখায় ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম চালু রয়েছে। এক সময় প্রতিষ্ঠানটিতে কারিগরী অংকন শিক্ষা (জ্যাকা), লোহা লক্করসহ বিভিন্ন কারিগরী বিষয়ে পাঠদান করা হতো। ফলে সে সময় কলেজটির নামকরণ ছিল সৈয়দপুর সরকারি কারিগরী মহাবিদ্যালয়। কিন্তু পরবর্তীতে কারিগরী বিষয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে। এরপর গত ২০২০ সালে কলেজটি নাম পরিবর্তন করে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ করা হয়েছে।
প্রাচীনতম ও সুনামখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির গ্রন্থাগারের অনেক পুরাতন মূল্যবান বইপত্র ছিল। আর প্রতিষ্ঠােনের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা আহরণের প্রয়োজনে গ্রন্থাগারের মূল্যবান বইপত্র সংগ্রহ করে অনেক বিষয়ে উপকৃত হয়ে আসছিল। এ অবস্থায় গত ২৩ জুন বিকেলে কলেজের গ্রন্থাগারের বিপুল পরিমাণ পুরাতন মূল্যবান বইপত্র অনেকটাই গোপনে বিক্রি করে দেয় অধ্যক্ষ।
উপজেলার কামারপুকুর এলাকার পুরাতন কাগজ ব্যবসায়ী মো. আখতারুল ইসলামের কাছে ১ হাজার কেজিরও বেশি পরিমাণ বইপত্র বিক্রি করা হয়। ৩০ টাকা কেজি দরে কেনা বইপত্রগুলো একটি পিকআপ ভ্যানে করে নিয়ে যান ওই পুরাতন কাগজ ব্যবসায়ী। পরে গ্রন্থাগারের বই বিক্রির বিষয়টি চাউর হয়ে পড়ে।
যদিও সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পুরাতন বইপত্র বিক্রির আগে শিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অনুমতি নেওয়ার নিয়ম। কিন্তু সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের গ্রন্থাগারের পুরাতন মূল্যবান বইপত্র বিক্রির ক্ষেত্রে কোন রকম সরকারি নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয়নি। তড়িঘড়ি করে অতি গোপনে বইগুলো বিক্রি করা হয়েছে। বই বিক্রির টাকা কলেজের সরকারি তহবিলেও জমা করা হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষ গোলাম আহমেদ ফারুক তাঁর পছন্দের শিক্ষক কর্মচারীদের মাধ্যমে অতি গোপনে বইগুলো বিক্রি করে পুরো টাকা পকেটস্থ করেন।
এ নিয়ে কথা হলে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের সহকারি গ্রন্থাগারিক ইবনে ফজল প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগারের ৮৫০ কেজি পুরাতন বই বিক্রি কথা স্বীকার করেন। তিনি জানান, অধ্যক্ষ স্যারের নির্দেশে উল্লিখিত পরিমাণ বই ১৮ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম আহমেদ ফারুক গ্রন্থাগারের পুরাতন বই বিক্রির কথা সাংবাদিকদের কাছে অপকটে স্বীকার করেন। তবে বিক্রি করা বইয়ের পরিমাণও জানাতে পারেননি অধ্যক্ষ।
তিনি বলেন, গ্রন্থাগারের জন্য নতুন বইপত্র কেনার উদ্দেশ্যে পুরাতন সিলেবাসের ও নষ্ট হয়ে যাওয়া কিছু বইপত্র বিক্রি করে দেওয়া হয়। আর প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত আভ্যন্তরীণ একটি কমিটির মাধ্যমে বইগুলো বিক্রি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। কিন্তু তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ওই কমিটির আহবায়ক কিংবা সদস্যদের নাম বলতে পারেননি। তিনি সরকারি নিয়মনীতি মেনে বই বিক্রি না করার জন্য নিজের ভূল স্বীকার করেন বলেন, ভবিষ্যতে আর এমনটি হবে না।