শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ক্যাপিটা টাইমস স্কয়ার মার্কেট: প্রতিশ্রুতির ফাঁদে পাঁচ শতাধিক ক্রেতা টঙ্গীতে ১৬ মামলার আসামি ‘নারকাটা’ মাসুদ গ্রেপ্তার ইঞ্জিনিয়ারিং স্টাফ কলেজ বাংলাদেশ এর প্রশিক্ষণ, উৎসাহ উদ্দীপনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন। কাপাসিয়া প্রেসক্লাবের উদ্যোগে ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’ পালিত কাপাসিয়ায় হয়রানিমুলক মিথ্যা ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ বিরামপুরে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালিত কাপাসিয়ায় সিভিল সার্জন ডাঃ মামুনুর রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন কাপাসিয়ায় বিএনপির পাল্টা সংবাদ সম্মেলন গাজীপুর মহানগর শ্রমিক দলের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালিত মহান মে দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ তৃণমূল জনতা পার্টির আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ

সময়ের দেশ ডেস্ক:
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ, ২০২১
  • ২৯৩ বার পড়া হয়েছে

মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত হত্যাযজ্ঞের দিন আজ। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ দিবাগত রাতে পাক-হানাদার বাহিনী ‘অপারেশন সার্চ লাইট’-এর নামে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে চালায় বিশ্ব ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা। ২৫শে মার্চ, গণহত্যা দিবস আজ।

‘অপারেশন সার্চ লাইট’ ছিল বাঙালির একটি প্রজন্মকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার এক নারকীয় পরিকল্পনা। সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জেনারেল টিক্কা খান বলেছিলেন, ‘আমি পূর্ব পাকিস্তানের মাটি চাই, মানুষ চাই না’। ফলশ্রুতিতে বাঙালি জাতির জীবনে নেমে আসে বিভীষিকাময় ভয়াল কালরাত্রি। এক ভয়াল ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতার স্মৃতি হিসেবে চিহ্নিত এই রাত।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিত পন্থায় বাঙালি হত্যার মহোৎসবে মেতে উঠেছিল। রক্তের স্রোতে ভাসিয়ে দিতে চেয়েছিল বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রাম। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২৫শে মার্চ পাক-হানাদার বাহিনী স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর হিংস্র দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোন মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলার সর্বস্তরের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ২৫শে মার্চ কালো রাতে শুরু হওয়া পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা চলতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় ধরে। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় বহুল প্রতীক্ষিত মহান স্বাধীনতা। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সেই রাতে ৭০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেফতার হলো আরো ৩০০০ লোক। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। সমস্ত পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চললো মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করলো ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট, লুট আর ধ্বংস তাদের নেশায় পরিণত হল যেন। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হল। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠলো শকুন তাড়িত শ্মশান ভূমি।’

পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্কট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তানি সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয় : ‘১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।’

১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা।

এদিন সকালে পাকিস্তান পিপলস্ পার্টি (পিপিপি) প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে ৪৫ মিনিট ধরে বৈঠক করেন। রংপুর, সৈয়দপুর ও চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর গুলিতে ১১ জন নিহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়।

বঙ্গবন্ধু ব্যবসা-বাণিজ্য বিশেষ করে পাট ব্যবসা ও টেলিযোগাযোগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। তিনি দেশের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে সরকারের অতিরিক্ত কালক্ষেপণে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। হেলিকপ্টারযোগে তারা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস পরিদর্শন করে বিকেলের মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে আসে।

ঢাকার ইপিআর সদর দফতর পিলখানাতে অবস্থানরত ২২তম বালুচ রেজিমেন্টকে পিলখানার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। সেনাবাহিনীর মেশিন গানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে উঠে বিভীষিকাময়।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজীর জনসংযোগ অফিসারের দায়িত্বে থাকা সিদ্দিক সালিক-এর ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থেও এ সংক্রান্ত একটি বিবরণ পাওয়া যায়। সিদ্দিক সালিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল নিয়াজীর পাশেই ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অনুগত পাকিস্তানি হিসাবে পাক সামরিক জান্তার চক্রান্ত তিনি খুব কাছে থেকেই দেখেছেন।

২৫ মার্চ, অপারেশন সার্চ লাইট শুরুর মুহূর্ত নিয়ে তিনি লিখেন ‘নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সামরিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এমন আঘাত হানার নির্ধারিত মুহূর্ত (এইচ-আওয়ার) পর্যন্ত স্থির থাকার চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে গেল। নরকের দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল।’

পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাবির জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।

বিশিষ্ট নজরুল গবেষক ও বাংলা একাডেমির সাবেক পরিচালক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নীলক্ষেত আবাসনের ২৪নং বাড়িতে। ওই বাড়ির নিচে দু’পায়ে গুলিবিদ্ধ দুই মা তাদের শিশু সন্তানকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সিঁড়ি ভেসে যাচ্ছিল তাদের রক্তে। পাক হানাদাররা ভেবেছিল অন্য কোন দল হয়ত অপারেশন শেষ করে গেছে। তাই তারা আর ওই বাড়িতে ঢোকেনি। অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম তখন প্রাণে বেঁচে যান।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চ লাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সকল পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান।

এ বছর ২৫ মার্চ এমন একটা সময়ে সমাগত যখন স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে ঘোষিত ‘মুজিব বর্ষ’ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উদ্যাপিত হচ্ছে। এই উৎসবের প্রাক্কালে বাঙালি জাতি ২৫শে মার্চের কালরাত্রিতে নিহত সকল শহীদসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও সম্ভ্রমহারা ২ লক্ষ মা-বোনকে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করবে।

এ বিভাগের আরো সংবাদ

আজকের নামাজের সময়সুচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৩:৪৬ পূর্বাহ্ণ
  • ১২:০৩ অপরাহ্ণ
  • ১৬:৪০ অপরাহ্ণ
  • ১৮:৫২ অপরাহ্ণ
  • ২০:১৮ অপরাহ্ণ
  • ৫:১১ পূর্বাহ্ণ
©2020 All rights reserved
Design by: POPULAR HOST BD
themesba-lates1749691102