গাজীপুর মহানগরের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের কুনিয়া তারগাছ শিংপাড়ায় বৃহস্পতিবার রাতে মাদক কারবারি কিশোর গ্যাং সদস্যরা ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। রাস্তায় যাকে পেয়েছে তাকেই পিটিয়ে আহত করেছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় স্থানীয় একজন বাড়ির মালিককেও কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে। আহত মনিরুল ইসলাম মনিরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। আহত আরও ১০ জনকে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, কুনিয়া তারগাছ শিংপাড়ার ইসমাইল কসাইয়ের দুই ছেলে কিশোর গ্যাং লিডার হাবীবুল্লাহ হাবীব ও আরিফ এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করে। এ দুই সহোদরের নেতৃত্বে প্রতিদিন বিকাল থেকেই এলাকার প্রতিটি অলিগলি ও খোলা মাঠে মাদকের হাট বসে।
এ কিশোর গ্যাং সদস্যদের প্রত্যেকের পকেটে থাকে ইয়াবা ট্যাবলেট। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে শিংপাড়া গলিসহ প্রতিটি শাখা রাস্তা এ কিশোর গ্যাং সদস্যদের দখলে চলে যায়।
আশপাশের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বাসায় ফেরার পথে কিশোর গ্যাং সদস্যরা অস্ত্রের মুখে মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। একটি হত্যাকাণ্ডের মামলায় গ্যাং লিডার হাবীব সম্প্রতি জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি হাবীব-আরিফের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাং সদস্যরা শিংপাড়া গলি রাস্তায় অস্ত্রের মুখে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন গণহারে ছিনতাই করে।
এ সময় পাশের বাড়ির মালিক মনিরুল ইসলাম মনির ও সাইফুল ইসলাম হাজারীর বাড়ির কয়েকজন ভাড়াটিয়াও ছিনতাই ও মারধরের শিকার হন।
খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতিবাদ জানান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হাবীব, আরিফ, ইয়াসিনের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাং সদস্যরা সংঘবদ্ধ হয়ে ধারাল অস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়া দেয়।
এ সময় রাস্তায় যাকে পেয়েছে তাকেই পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করেছে তারা। ঘটনার সময় বাড়ির মালিক মনিরুল ইসলাম মনির ও সাইফুল ইসলাম হাজারী শিংপাড়া গলির একটি দোকানের সামনে বসা ছিলেন।
কিশোর গ্যাং সদস্যরা মনিরকে দোকানের সামনে ফেলে উপর্যুপরি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। একই সময় সাইফুল ইসলামকেও পিটিয়ে আহত করা হয়।
পরে সন্ত্রাসীরা মনিরের বাড়িতে গিয়েও ভাঙচুর চালায়। তাদের তাণ্ডবে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে সব দোকানপাট বন্ধ ও রাস্থাঘাট খালি হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই তারা পালিয়ে যায়।
আহত মনিরের বৃদ্ধা মা সানোয়ারা বেগম বলেন, সন্ত্রাসী হাবীবুল্লাহ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম দুলাল মেম্বারের বাড়িতে থাকে। তাই কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। আমার ছেলের কিছু হলে কাউকে ছাড়ব না।
এলাকাবাসী জানান, ৩৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম দুলাল এর পুত্রের ছত্রছায়ায় কিশোর গ্যাং সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। মাদকে এলাকার অলিগলি ছেয়ে গেছে। ঘর থেকে বের হলেই মাদক। পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে সব সময় জটলা বেঁধে থাকে মাদক কারবারি কিশোর গ্যাং সদস্যরা। তাদের ভিড় ঠেলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুল-কলেজে যায় শিক্ষার্থীরা। এতে সন্তানদের নিয়ে সব সময় উদ্বেগ-উৎকষ্ঠায় থাকেন অভিভাবকরা।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম দুলাল বলেন, মাদক কারবারি বা কিশোর গ্যাং সদস্যরা আমার বা আমার ছেলেদের কাছে কখনই কোনো আশ্রয়-প্রশ্রয় পায় না। তবে হাবীবুল্লাহ এক সময় আমার বাড়িতে নিয়মিত আসতো। শাকিল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমিই তাকে পুলিশে সোপর্দ করেছিলাম। জেল থেকে বের হওয়ার পর আমি তাকে আর আশ্রয় দিইনি। বরং তাকে সংশোধনের জন্য বহু চেষ্টা করেছি। কিন্তু খারাপ তো খারাপই থেকে যায়, মন্তব্য করেন তিনি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে গাছা থানার ওসি মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনাটি খুবই লোমহর্ষক। ছিনতাই ও মাদক কারবারের প্রতিবাদ করায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারিরা একজনকে কুপিয়ে আহত করেছে। খবর পেয়েই আমরা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়েছি। আশপাশের বিভিন্ন বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ৫ জনকে গ্রেপ্তার করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসীদের ধরতে এলাকায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে।