অধিকার আদায় করে নিতে নারীরা যেন শিক্ষা-দীক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের তৈরি করে নেন, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সেই আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দিবসটি উপলক্ষে সোমবার মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি নারীদের একটা কথা বলব যে ‘নারীদের অধিকার দাও, নারীদের অধিকার দাও’ বলে শুধু চিৎকার করা আর বলা আর বক্তৃতা দেওয়া… এতে কিন্তু অধিকার আসে না। অধিকারটা আদায় করে নিতে হবে। আদায় করবার মত যোগ্যতাটা অর্জন করতে হবে। আর সেই যোগ্যতা আসবে শিক্ষা-দীক্ষা, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে।”
নারীরা যেন নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারে, তা নিশ্চিত করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরার পাশপাশি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন সরকার প্রধান।
তিনি বলেন, এখন একেবারে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড থেকে যে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, তার ৭৫ শতাংশ আগে মেয়েরাই পেত। এখনও প্রায় ৭০ শতাংশ মেয়েরাই পায়। এছাড়া সরকার প্রায় ২ কোটি ৫ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি ও উপবৃত্তি দিচ্ছে, সেখানেও মেয়েদের অংশটাই বেশি।
“কারণ সমাজকে যদি আমাদের গড়ে তুলতে হয়, তাহলে শিক্ষার ক্ষেত্রেও নারী,পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে শিক্ষা দিতে হবে। আর প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও আমরা বলছি যে প্রতিটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে নারী পুরুষ নির্বিশেষে তারা প্রশিক্ষণ নিতে পারেন, যাতে যে কোনো কাজে মেয়েরা নিজেদের যোগ্যতা দেখাতে পারে এবং তারা কাজ করতে পারে।”
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে কোনো নারী জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পদ পেতেন না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সর্বক্ষেত্রে নারীদের অবস্থানটা নিশ্চিত করা হয়েছে।
“পার্লামেন্টের কথা নাই বললাম। বর্তমানে বাংলাদেশে স্পিকার, লিডার অব দ্য হাউস, লিডার অফ দ্য অপজিশন- সবই মহিলারা। এটা আমরা স্থান করে নিয়েছি। কাজেই, আমি মনে করি যে এটাই আমাদের সব থেকে বড় অর্জন বাংলাদেশের।”
শেখ হাসিনার ভাষায়, একটি সমাজের অর্ধেক যদি অকেজো থাকে, তাহলে সেই সমাজ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে।
তিনি বলেন, “আগে ধর্মের নাম নিয়ে বা সামাজিকতার কথা বলে নারীদের ঘরে বন্ধ করে রাখার যে প্রচেষ্টা ছিল, সেই অচলায়তন ভেদ করে মেয়েরা এখন এগিয়ে যাচ্ছে।”
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তন এ অনুষ্ঠানে সংগ্রামী পাঁচ নারীকে জাতীয় পর্যায়ে ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতার’ সম্মাননা দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তাদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দরা।
বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলামসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উদ্ধৃত করে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ইসলামের ইতিহাস পড়লে জানা যায় যে মুসলমান মেয়েরাও পুরুষদের সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে যেত, অস্ত্র এগিয়ে দিত, আহতদের সেবা শুশ্রূষা করত। হযরত রাসুলে করীমের (সা.) স্ত্রী হযরত আয়েশা সিদ্দিকা নিজে বক্তৃতা করতেন। দুনিয়ায় ইসলামই নারীর অধিকার দিয়েছে।”