সৈয়দপুর পৌরসভার কমিউনিটি সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যা ঘটেছে এক কথায় তা দুঃখজনক। এমনটি প্রত্যাশা করেনি সৈয়দপুরবাসী।
পৌরসভার ওই অনুষ্ঠানে স্হানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম প্রধান অতিথির বক্তব্যের মাঝ পথে বিরক্ত হয়ে মঞ্চ থেকে নেমে আসেন।
নিঃসন্দেহে এটি পৌর পরিষদ তথা সৈয়দপুরবাসীর জন্য অত্যন্ত লজ্জা এবং হতাশাজনক । এর দায় পৌর মেয়রের একার নয়, পুরো পৌর পরিষদের ওপর এ দায়ভার বর্তায়।
একটি সুন্দর সাজানো অনুষ্ঠানে কী এমন ঘটলো যে মন্ত্রী মহোদয়কে তাঁর বক্তব্য অসমাপ্ত রেখে মঞ্চ ত্যাগ করতে হলো?
যারা দর্শক সারিতে ছিলেন তারা কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখলেন মন্ত্রী মহোদয় মঞ্চ থেকে নেমে আসছেন। মেয়র রাফিকা বহু অনুনয়-বিনিনয় করেও মন্ত্রীকে মঞ্চে ফেরাতে পারেননি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে মঞ্চের ওই দৃশ্য মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
ফলে এ নিয়ে পৌরবাসীর মাঝে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক করতে থাকে। গত সপ্তাহ জুড়ে এই ইস্যুটিই ছিল সবার প্রধান আলোচনার বিষয় বা “টক অব দ্য টাউন”।
প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিলো পৌর কমিউনিটি সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মঞ্চে। কেন মন্ত্রী মহোদয় মঞ্চ ছেড়ে নেমে এলেন ?
সেদিনের অনুষ্ঠানের শুরুটা ছিল চমৎকার। আমরা দেখলাম মন্ত্রী মহোদয় গাড়িবহর নিয়ে পৌরসভা প্রাঙ্গণে এলেন । পুলিশের একটি চৌঁকস দল তাঁকে গার্ড আব অনার দিল। তিনি গার্ড পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করলেন। একটি স্কুলের প্রশিক্ষিত এক দল ছাত্রী নেচে-গেয়ে মন্ত্রী মহোদয়কে বরণ করলো। পরে তিনি বেলুন উড়িয়ে ও ফলক উন্মোচন করে পৌর কমিউনিটি সেন্টারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করলেন। এ পর্যন্ত সব কিছুই হয়েছে সুশৃঙ্খল ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে । কিন্তু বিপত্তি ঘটে সভা মঞ্চে গিয়ে। মন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সেদিন জনসমাগমে কমিউনিটি সেন্টার ছিল কানায়-কানায় পূর্ণ। সৈয়দপুরের মানুষ অধির আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন মন্ত্রীর মুখ থেকে প্রতিশ্রুতি ও আশার কথা শোনার জন্য।
স্হানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয় সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়। দেশের পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদসহ স্হানীয় সরকার সমূহের উন্নয়ন কার্যক্রমে বরাদ্দ ও তদারকির দায়িত্ব ওই মন্ত্রনালয়ের। সে বিবেচনায় স্হানীয় সরকার মন্ত্রীকে নিজেদের কাছে পাওয়া নিঃসন্দেহে সৈয়দপুর পৌরসভার জন্য ছিল খুবই আরাধ্য ও প্রত্যাশিত। কিন্তু একজন মন্ত্রীর সন্মান রক্ষার স্বার্থে সেদিন কমিউনিটি সেন্টারের মঞ্চে কী সহায়ক পরিবেশ ছিল? এ প্রশ্ন তুলেছেন শহরের অনেকেই।
তারা বলেন , পাবলিক অনুষ্ঠানে একজন পূর্ণমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মঞ্চের পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত সেটি মেয়র মহোদয়ের ধারণায় না থাকাই স্বাভাবিক। তবে কাউন্সিলরদেরতো সে ধারণা থাকার কথা। কারণ কাউন্সিলরদের মধ্যে বেশ কয়েকজন একাধিক বার নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তা হলে সেদিনকার মঞ্চে কেন ওই হ-য-ব-র-ল অবস্হার সৃষ্টি হলো ? প্রধান ও বিশেষ অতিথিরা মঞ্চে থাকা অবস্থায় কাউন্সিলররা যে যেদিক দিয়ে পেরেছেন অবলিলায় মঞ্চে ওঠা নামা করেছেন।
দর্শকসারির কেউ কেউ বলেছেন, যে মঞ্চে স্বয়ং স্হানীয় সরকার মন্ত্রী প্রধান অতিথির আসনে, সেখানে কাউন্সিলরদের কী কাজ? তারাও কী বিশেষ অতিথি বা আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন? দু’এক জন বিদ্রুপ করে বলেছেন, একই ড্রেসকোডে কাউন্সিলরদের জন্য দিনটি ছিল ফ্যশন সো’র ফটো সেশনের ।
ছোট্ট একটি মঞ্চে প্রধান অতিথির বক্তব্য চলাকালে পেছনে দাঁড়িয়ে কুঁড়ি জন কাউন্সিলর বাতচিত করলে মঞ্চের পরিবেশ যে “হরি ঘোষের গোয়াল” এ পরিণত হবে এমটাইতো স্বভাবিক। এই সহজ বিষয়টি মেয়র মহোদয়ের মাথায় খেলেনি এ নিয়ে কেউকেউ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে একজন সাবেক কাউন্সিলর বলেন, এর আগেও পৌরসভার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একাধিক মন্ত্রী এসেছেন, তখনতো দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাড়া কাউন্সিলরদের কেউ মঞ্চের ত্রিমীমানায় ভিরতে পারেননি । এবার বর্তমান মেয়রের সরলতার সুযোগ নিয়ে তারা মঞ্চে জটলা করে অনুষ্ঠানের বারোটা বাজালেন।
মেয়র রাফিকাকে এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।
কারণ তিনি আরও দীর্ঘ দিন মেয়রের দায়িত্বে থাকবেন। ভবিষ্যতে আরও একাধিক মন্ত্রী বা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তাদের আগমন ঘটবে পৌরসভার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। সে সময় যাতে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে পৌর মেয়রকে।
কারণ পৌর মেয়র হলেন এই শহরের অভিভাবক।
মানুষ ভোট দিয়ে তাঁকে ওই সন্মানের অসনে বসিয়েছেন। শহর পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখাসহ অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি পৌরসভার মন্মান জনসম্মুখে তুলে ধরার শতভাগ দায়িত্ব মেয়রের । এর ব্যতিক্রম হলে তাঁকেই এর দায়ভার নিতে হবে। শহরবাসীর কাছে জবাবদিহি করতে হবে মেয়রকে। আর কাউন্সিলররা জবাবদিহি করবেন মেয়রের কাছে। তাই মেয়রকে এগুতে হবে সতর্ক পায়ে। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে হতে হবে আরও কঠিন ও কৌশলী।
সামনে দীর্ঘ পথ। এই শহরের মানুষ তাঁর দিকেই তাকিয়ে থাকবে।
আমরা মেয়রের সাফল্য কামনা করছি।