ব্ল্যাকবেবি ও গোল্ডেন ক্রাউন নামক নতুন জাতের তরমুজ চাষ করে লাভের মুখ দেখেছেন ঠাকুরগাঁও জেলার কামারপুকুর গ্রামের শাহীন আলম। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের একজন ছাত্র। করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় গ্রামের বাড়িতে পরীক্ষামূলক ভাবে এ নতুন জাতের তরমুজ চাষ করে এলাকায় এবং দেশে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছেন।
জানা যায়, ২৫ শতাংশ জমিতে তরমুজ চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন তিনি। শাহীন আলম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আমিনুল হকের পরামর্শে এবং সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল করিমের ছাদ বাগান দেখে অনুপ্রানিত হয়ে ইউটিউব এবং অনলাইন থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে ব্ল্যাকবেবি ও গোল্ডেন ক্রাউন নামের তরমুজের জাত সম্পর্কে ধারনা পান।পরবর্তীতে তার চাচাতো ভাই মানিকুজ্জামানকে সাথে নিয়ে মাঠে কাজ শুরু করেন এবং সফলতা পান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহীন আলম জানায়,”করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর গ্রাম চলে আসি।গ্রামে বিভিন্ন সেচ্ছাসেবা কাজে যুক্ত হই। সোচ্ছাসেবী কার্যক্রমের পাশাপাশি ভাবলাম কিছু করা যায় কি না।এরপর আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক আমিনুল হক স্যারের সাথে পরামর্শ করি।অল্প সময়ে কি ভাবে লাভজনক হওয়া যায় এবং সেই সাথে অনেক কৃষক ভাই ও শিক্ষার্থীকে অনুপ্রাণিত করা যায়।
অনেক পর্যালোচনার পর অসময়ের তরমুজ চাষের কথা মাথায় আসে।এ ক্ষেত্রে আমার বিভাগের শিক্ষক রেজাউল করিম স্যারের ছাদ বাগানের বিভিন্ন দেশী বিদেশী ফলের গাছ এবং ফলন আমাকে অনুপ্রানিত করেছে।
আর এরপর থেকেই কাজ শুরু করে দিই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে মাঠ কাজ করছি আবার অসময়ে তরমুজ চাষ করছি এটা দেখে প্রথম দিকে অনেকেই হাসাহাসি করেছিলো।
অনেকেই নিরুৎসাহিতও করে কিন্তু আমি আমার চাচাতো ভাই মানিকুজ্জামান কে সাথে নিয়ে কাজ করে যেতে থাকি এবং অবশেষে সফলতা অর্জন করি।
শাহীন আলমের এ সফলতার খবব ছড়িয়ে পরেছে তার ক্যাম্পাস প্রাঙ্গনেও।তার এ ভিন্ন ধর্মী কাজের প্রশংসা করছে তার শিক্ষক,সহপাঠী সহ সকলে।
এ বিষয়ে জবির সহকারী অধ্যাপক রেজাউল করিম জানায়,”করোনাকালীন সময়ে যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, জীবন জীবিকা অনেকের সংকুচিত তখন শাহীনের তরমুজ চাষের সফলতা অবশ্য ই একটা ভালো উদাহরণ। স্বল্প পুজিত ছোটখাট জমি ব্যবহার করে উন্নত জাতের এই চাষাবাদ আধুনিক কৃষির অন্যতম উদাহরণ। আমাদের অনেকের রিসোর্স থাকে কিন্তু কিভাবে ব্যবহার করব সেটা জানিনা কিন্তু শাহীন সেটা দেখিয়েছে। আমার নেপালের কাঠমুন্ডু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল, আমি দেখেছি তারা মাটির প্রতিটি ইঞ্চি কিভাবে ব্যবহার করে। আমাদের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে স্বল্প জায়গা অধিক পরিমাণ উৎপাদন প্রয়োজন। তাই রিসোর্স থাকা সাপেক্ষে যে কেউ কৃষিতে আধুনিক চাষাবাদে বিনিয়োগ করলে শাহীনের মত সফলতার মুখ দেখবে সেইসাথে দেশ ও স্বনির্ভর হবে।”
তরমুজ চাষে শাহিনীর প্রায় ৩৫ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে বলে জানায়।জমি প্রস্তুত করে ফলন আসা পর্যন্ত সময় লেগেছে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ দিন।এখন প্রতিটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা ধরে।
বিক্রি শেষ হলে এখন থেকে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মতো লাভবান হতে পারবে বলে তারা আশাবাদী।