শেরপুর: অযত্ন , অবহেলা আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সাপনই আশ্রয়ন প্রকল্পটির এখন বেহাল দশা। ভূমিহীনদের স্বপ্নের ঠিকানায় তাদের কস্টের যেন শেষ নেই। দ্রুত সংস্কার করে আশ্রয়নটি টিকিয়ে রাখার দাবি প্রকল্পে আশ্রিতাদের।
দুস্থ ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য নালিতাবাড়ী উপজেলার যোগানীয়া ইউনিয়নের গেরামারা গ্রামের সাপনই বিলের খাস জমির উপর ২০০০ সনে নির্মিত হয় আবাসন প্রকল্প। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ২৩ একর খাস জমির উপর একশত ভূমিহীন পরিবারে জন্য ১০টি ব্যারাক নির্মাণ করা হয়। তবে বসবাসের আগেই একটি ব্যারাক ঝড়ে উড়ে যাওয়ায় বাকি ৯টি আশ্রয়ন প্রকল্পে আশ্রয় নেন ৯০টি পরিবার। কিন্তু অযত্ন আর অবহেলায় সেগুলো এখন ব্যবহারের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘর ভেঙ্গে গেছে, যেগুলো টিকে আছে একটু বৃষ্টি হলেই সেগুলোর চাল দিয়ে পানি পড়ে, বৃষ্টি হলেই সৃস্টি হয় জলাবদ্ধতা। এছাড়া ১০টি টিউবওয়েলের ৯টিই বিকল হয়ে পড়েছে। প্রকল্পের প্রবেশ মুখে রাস্তাটিরও ব্যহাল দশা, ফলে মানবেতর জীবন যাপন করছেন আশ্রিতরা। বর্ষাকালে তাদের চলাচল অত্যান্ত কঠিন হয়ে পড়ে। প্রতি ১০টি পরিবার জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থানে পয়ঃনিষ্কাশন(টয়লেট) এর ব্যবস্থা থাকলেও তা আজ ব্যবহারের অনুপযোগী। সাস্থ্যসম্যত পয়ঃনিষ্কাশন ত দূরের কথা কোন কোন স্থানে টিনের দুটি বেড়া পড়ে আছে, যা কোন আঙ্গিকেই টয়লেটের জায়গা হিসেবে চেনার উপাই নেই। প্রতিটি পরিবার টয়লেট ও খাবার পানির জন্য রীতিমত যুদ্ধ করে যাচ্ছে। অতি বৃষ্টি ও বর্ষার সময় আশ্রয়কেন্দ্রের অনেক ঘরে পানি প্রবেশ করে। ফলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় তাদের। বর্ষার মওসুমে যাতাযাত ব্যবস্থা অনুপযোগী হবার কারনে অসুস্থ্য রোগীকে ঘর থেকে বের করে নিতে রীতিমত হিমশিম খেতে হয়। ফলে ঘটে অনাকাঙ্খিত কিছু দূর্ঘটনা। ভূক্তভোগীদের একজন বলেন, গত কিছুদিন আগে অসুস্থ্য এক বাচ্চাকে ঘর থেকে বের করে হাসপাতালে নেওয়ার প্রাক্কালে মৃত্যুবরণ করে। তাদের অভিযোগ আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারীদের যাতায়াত অসুবিধার কারণে মাঝে মধ্যেই পড়তে হয় নানান অসুবিধায়। স্থানীয় ও আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারীদের সূত্রে জানাগেছে, আশ্রয়ন প্রকল্পটি শুরুর দিকে কিছুটা ভাল থাকলেও ধীরে ধীরে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। তাদের মতে সুপরিকল্পিতভাবে আবাসনটি পরিচালনা না করার জন্য এসব অসুবিধা দিন দিন বাড়ছে। বসবাসকারী সদস্য হাসমত আলী (৪৫) বলেন, ঘরে পানি উঠে, ঘর দরজা সব ভেঙ্গে গেছে, ঘরের পাইর কাঠ উলি পোকা খেয়ে ফেলছে, ঘুনে ধরে সব নস্ট হয়েগেছে, বন্যায় দিঘি গড়িয়ে যায় মাছ চাষ করে খেতে পারিনা, চলাফেরা খুব কস্ট হয় আমাদের, সরকারের কাছে আমাদের আবেদন আমাদের বিষয়টি যেন একটু ভাবে এবং সহযোগিতা করেন। নাম না জানা এক গৃহিনী বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ আমাদের একটা থাকার মত জায়গা দিয়েছেন, তবে বর্তমানে আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ, আমাদের ঘরগুলো এখন ভেঙ্গে গেছে পোলাপান নিয়ে থাকতে পারিনা পানি আসে আমরা ঘর থেকে দুয়ারে নামতে পারিনা এটা আমাদের খুব সমস্যা। টয়লেটে যেতে পারিনা টয়লেট ভেঙ্গে গেছে ব্যবহার করা যাচ্ছেনা। যার কারনে নানান অসুখ-বিষুখে পড়তে হয়। সরকার যদি আমাদের এই জায়গাটা মাটি কেটে, টয়লেট ও ঘরগুলো ঠিক করে দিত আমরা কোন রকম পোলাপান নিয়ে এখানে থাকতে পারতাম। এই কস্টের কথাগুলো কার কাছে বলব, আমরা গরীব মানুষ আমাদেরকে দেখেও না দেখার ভান করলে আমরা কই যাব। প্রকল্পে দায়িেেত্বে থাকা সভাপতি ইব্রাহীম খলিল (৪০) বলেন, আমাদের এখানে পতিত অনেক জায়গা আছে, সরকার যদি মুজিব বর্ষে আমাদের কিছু ঘর উপহার দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিত, আমরা সবাইকে নিয়ে এখানে বসবাস করতে পারতাম।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও হেলেনা পারভীন বলেন, যোগানীয় ইউনিয়নে সাপনই আশ্রয়ন কেন্দ্রটি আমরা উপজেলা প্রশাসন থেকে পরিদর্শনে গিয়ে দেখেছি। সেখানে কিছু সমস্যা বিদ্যমান, তবে পরিদর্শনের পরবর্তীতে আমরা কিছু এনজিওর সাথে লিংক করেছি, যার মাধ্যমে চলমান সমস্যাগুলোর মধ্যে কিছু সমস্যার সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে রাস্তাঘাট ও আশ্রয়ন প্রকল্পের বাড়িগুলোর যেই অবস্থা সেগুলো সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে। ইতিমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে কথা হয়েছে, সেখানে আমরা যদি একটা বাঁধ নির্মান করে দেই এবং মাটি কেটে আরও উঁচু করি তাহলে উদ্বুদ্ধ যে পরিস্থিতি আছে তা সমাধান করা সম্ভব। সামনে যে বরাদ্দগুলো আসবে সেগুলো পরিকল্পিত পরিকল্পনা নিয়ে আমরা সমাধান করার চেষ্ঠা করব।