করোনাকালীন বাজারে সবজির ন্যায্য মুল্য না থাকায় শতশত কৃষক বিপাকে পরেছে। সল্পমুল্যে সবজি বিক্রি করার পাশাপাশি অনেক কৃষকের সবজি ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শেরপুর জেলা সদরসহ ৫ টি উপজেলায় প্রচুর পরিমানে সবজি উৎপাদন হয়। তবে শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলার চরাঞ্চলে সবজির আবাদ হয় বেশি। এছাড়া ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদীও নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় ও প্রচুর পরিমানে সবজি উৎপাদন হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর গ্রীষ্মকালীন সময়ে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় জেলাসদরসহ ৫ টি উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। গ্রীষ্মকালীন সবজির মধ্যে রয়েছে, কড়ল্লা,কাকরোল,চিচিংগা, ঝিংগা, কদু, বেগুন,বটবটি ও কুমুরসহ বিভিন্ন জাতের সবজি উল্লেখযোগ্য। শেরপুর সদরও নকলা উপজেলার চরাঞ্চলে এসব সবজির আবাদ করা হলেও শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলায় পাহাড়ি এলাকার বেশিরভাগ কৃষকেরা বনবিভাগের জমিতে সবজির আবাদ করে থাকে। শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুরি ফরেস্ট রেঞ্জ এলাকায় বনবিভাগের শতশত একর পাহাড়ি জমিতে সবজির আবাদ করা হচ্ছে। সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা গেছে শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুরি, খাড়ামুড়া, মেঘাদল,কর্নঝোড়া,কাকিলাকুড়া, বাবেলাকুনা,হাড়িয়াকোনা,ডুমুরতলা,ঝুলগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকা ও ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের রাংটিয়া, সন্ধ্যাকুড়া, গোমড়া, হলদীগ্রাম,ফাঁকড়াবাদ,ভারুয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর পরিমানে সবজি উৎপাদন হয়। এখানে উৎপাদিত সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করা হয়। এবার গ্রীষ্মকালীন সময়ে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শেরপুর জেলা সদরসহ ৫টি উপজেলায় সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। সীমান্তের পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন হাটে-বাজারে পাড়া মহল্লায় প্রতিদিন শতশত মন সবজি বিক্রি হচ্ছে। ব্যাবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখানের সবজি ঢাকা,সিলেট,চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করা হয়। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনাকালীন সময়ে পরিবহন সমস্যাসহ নানা কারনে সবজির বাজারে ধ্বস নেমেছে। স্বল্পমুল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে সবজি । আবার অনেক সময় বাজারে পাইকার না থাকায় উত্তোলন করা সবজি ক্ষেতেই পঁচে নষ্ট হযে যাচ্ছে। প্রতিমন চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা মন দড়ে। কড়ল্লা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা মন দড়ে। এতে ক্ষেত থেকে উত্তোলন খরচও উঠছে না। পাইকার ফাকরাবাদ গ্রামের শফিকুল, আব্দুস ছালাম,রফিকুল ইসলাম,সন্ধ্যাকিড়া গ্রামের কামরুস, মানিককুড়া গ্রামের জামালসহ আরো আনেকেই জানান, তারা দীর্ঘদিন যাবৎ সবজির ব্যাবসা করেন। ট্রাকযোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সবজি নিয়ে তারা বিক্রি করে থাকেন। তাদের মতে করোনা কালীন সময়ে ট্রাকে সবজি পরিবহন করতে নানা ঝুটঝামেলা পোহাতে হয়। অনেক সময় ট্রাকও পাওয়া যায় না। আবার পাওয়া গেলেও ভাড়া দিতে হয় বেশি। এছাড়া বাজারে সবজির চাহিদাও কম। সবকিছু মিলে তাদের ব্যাবসায় এখন মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। কথা শ্রীবরদী উপজেলার কর্ণঝোড়া গ্রামের কৃষক ফজলুল করিম,বুলবুল,ময়দান আলী,জহুরুল ইসলাম,মেঘাদল গ্রামের আক্কাস আলীসহ আরো আনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি একর জমিতে এসব সবজির আবাদ করতে খরচ হয় প্রায় ৬০ হাজার টাকা। সবজির বাজার ভালো হলে প্রায় ৩ গুন লাভ হয়। কিন্তু বর্তমানে করোনা কালীন সময়ে নানান সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার কারনে সবজির বাজারে চাহিদা না থাকায় কম দামে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে উত্তোলন খরচও উঠছে না। তারা বলেন অনেক সময় উত্তোলন করা সবজি ক্ষেতেই পঁচে নষ্ট হযে যাচ্ছে। ফলে শতশত কৃষক সবজি আবাদ করে এখন দিশেহারা হয়ে পরেছে। শেরপুরের কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর খামাড় বাড়ির উপপরিচালক ড,মোহিদ কুমার দে,ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন অনুকূল পরিবেশ থাকায় গ্রীষ্মকালীন সময়ে সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে সবজির চাহিদাও কম থাকায় কৃষকেরা সবজির ন্যায্য মুল্য পাচ্ছে না।