জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) সশরীরে পরীক্ষা নেয়ার আগে অনলাইনেই রিভিউ ক্লাস নেয়া হবে প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা। তারা অনলাইনে নয় সশরীরেই রিভিউ ক্লাস করতে আগ্রহী।
জানা যায়, গত ৮ জুন নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক এর সভাপতিত্বে বিভিন্ন অনুষদের ডিন এবং বিভাগীয় প্রধানদের সাথে এক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা সূত্রে জানা যায় ১৩ জুন পরীক্ষার তারিখের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে এবং পরীক্ষা নেয়ার আগে ২ সপ্তাহ অনলাইনে রিভিউ ক্লাস হবে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, অনলাইন ক্লাসের ঘাটতি পোষাতে যে রিভিউ ক্লাস, সেই রিভিউ ক্লাসই যদি অনলাইনে হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের ঘাটতি পূরণ হবে না। কেননা করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের সিংহভাগই গ্রামে থাকায়, ইন্টারনেট সংযোগ ও ডিভাইসের সমস্যার কারণে অনেকে অনলাইন ক্লাসগুলোতে নিয়মিত হতে পারেনি।
এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের ফেসবুক গ্রুপে অনলাইনে রিভিউ ক্লাস সংক্রান্ত এক জরিপে দেখা যায় ৯৫১ ভোটের মধ্যে ৯৩% শিক্ষার্থী সশরীরে রিভিউ ক্লাস করতে চায়ে ভোট প্রদান করেছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপের জরিপে দেখা যায়, ১৩৬৫ জন শিক্ষার্থী সশরীরে রিভিউ ক্লাসের পক্ষে এবং মাত্র ২৬ জন অনলাইন রিভিউ ক্লাসের পক্ষে।
শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে যে অনলাইন ক্লাসে মোট শিক্ষার্থীর অর্ধেকেরও কম উপস্থিত থাকতো, সে অনলাইনেই রিভিউ ক্লাস? তাহলে রিভিউ ক্লাস না নিয়ে সরাসরি পরীক্ষা নেয়াই উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেন,”যখন অনলাইন ক্লাস গুলো করানো হয়েছিলো আমি গ্রামে থাকায় নেটওয়ার্ক সমস্যার কারনে ক্লাসে অংশ গ্রহন করতে পারি নি।আবার যদি অনলাইনেই রিভিউ ক্লাস করিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয় তাহলে আমার মতো অনেকেই বিপদে পরবে এবং ফল স্বরূপ রেজাল্ট খারাপ করবে”
আই ই আর ডিপার্টমেন্টের ১৫তম ব্যাচের শ্রেণী প্রতিনিধি সানজিদা মাহমুদ মিষ্টি বলেন ” অফলাইনে ক্লাস কার্যক্রম চালানো হলে আমাদের জন্যে অনেক ভাল হবে। কেননা অনলাইন ক্লাসে আমাদের শিক্ষার্থীদের অনেকেই উপস্থিত হতে পারে না।তাছাড়া সশরীরে ক্লাস করানো হলে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য কিছুটা সময় পাবে।যারা ঢাকার বাহিরে আছে নতুন বাসা খুঁজে নিতেও তাদের সুবিধা হবে। সশরীরে ক্যাম্পাসে পরীক্ষা নিতে পারলে,সশরীরে ক্লাস করানোও সম্ভব বলে আমি মনে করি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী মাহমুদুল বলেন, ‘রিভিউ ক্লাসগুলা অফলাইনে হলে পরীক্ষায় স্টুডেন্টদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে। পরীক্ষা যদি সশরীরে হয় তাহলে রিভিউ ক্লাসও সশরীরে নেয়া দরকার।
ফার্মেসী বিভাগের ছাত্রী ইসনাইন জান্নাত ইশা বলেন,”আমরা শরীরে ক্লাস ও পরীক্ষা দিতে চাই।অনলাইন ক্লাস চলাকালে আমরা দেখেছি যারা গ্রামে থাকে নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে তারা বিলের ধারে, নদীর পাড়ে,জঙ্গলে বসে মশার কামড় খেয়ে নানা প্রতিকূলতার মধ্য থেকে ক্লাস করেছে।আবার অনেকে ঠিক মতো ক্লাস করার সুযোগও পায় নি নেটওয়ার্ক ও ডিভাইস সমস্যার কারণে।এভাবে ক্লাস করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া কখনোই সম্ভব নয়।তাই আমরা সশরীরে উপস্থিত হয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা দিতে চাই।
অন্যদিকে সশরীরে ক্লাস ও পরীক্ষার দাবিতে গত ১০ জুন বৃহঃবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী নবনিযুক্ত উপাচার্য ড. ইমদাদুল হক বরাবর স্মারক লিপিও প্রদান করেছেন।
উল্লেখ্য গত বছরের ২ জুলাই সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের সভাপতিত্বে ট্রেজারার, অনুষদের ডীন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, রেজিস্ট্রার, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, প্রক্টর, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও লাইব্রেরিয়ানের সমন্বয়ে এক অনলাইন মিটিংয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার বিষয়ে নয়টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এর মধ্যে একটি ছিল, ক্যাম্পাসে ক্লাস শুরু হলে রিফ্রেশমেন্ট ক্লাসের জন্য তিন সপ্তাহ সময় দেয়া হবে। এ সময় ব্যবহারিক ক্লাসও নেয়া হবে।